রূপক আইচ, মাগুরাবার্তা
মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলা সদরের মধুমতি নদীতে বৃহস্পতিবার ( ৪ নভেম্বর) অনুষ্ঠিত হয়ে গলে আবহমান গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্যবাহী নৌকাবাইচ প্রতিযোগিতা ও গ্রামীণ মেলা । মাগুরা-২ আসনের সংসদ সদস্য সাবেক যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী ড. শ্রী বীরেন শিকদার এর বাবা প্রয়াত বিহারী লাল শিকদার এর স্মরণে ৮ম বারের মত অনুষ্ঠিত এ নৌকা বাইচে শেখ হাসিনা সেতুর মেলবন্ধনে নদীর দুধারে মেলায় প্রায় ৫কিলোমিটার জুড়ে কয়েক লক্ষ দর্শক সমাগম হয়।

নৌকা চলে বিদ্যুৎ গতীতে
মধুমতি নদীর দুই তীরে তখন লাখ দর্শকের উপস্থিতি। এর মধ্যেই কাশ আর ঘন্টা ধ্বণীর সাথে আনন্দ, উল্লাশে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দিপনা নিয়ে ছুটে চলে এক একটি বাইচের নৌকা। প্রায় ৫০ হাত লম্বা এক একটি নৌকায় সব মিলিয়ে অন্তত ৪০ জন বাইচাল। তাদের শক্ত হতের বৈঠার টানে নৌকা চলে বিদ্যুৎ গতীতে। মহম্মদপুর উপজেলা ক্রীড়াসংস্থার আয়োজনে এ নৌকা বাইচকে ঘিরে শেখ হাসিনা সেতুর উপর ও নদীর দুই ধারের প্রায় ৫ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে বসেছে গ্রামীণ মেলা। নৌকা বাইচ আর মেলা দেখে তাদের উৎসাহ ছিল চোখে পড়ার মত। এ বছর দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা ২৮টি নৌকা বাইচে অংশ নিয়েছে।

বাইচ নিয়ে কিছু মন্তব্য ও সুপারিশ
বাইচ উপলক্ষে ঢাকা থেকে এসেছেন জাহাঙ্গীর হোসেন। ৪০ বছর ধরে তিনি বিভিন্ন মেলায় ১ তারের বেহালা বিক্রি করেন। জাহাঙ্গীর হোসেনের ভাস্যমতে এত বড় নৌকা বাইচ আর মেলা তিনি খুব কমই দেখেছেন। তারমতে এটি এখন দেশের সবচেয়ে বড় নৌকা বাইচ। মাগুরা থেকে সস্ত্রীক মেলা দেখতে এসেছেন রবিউল ইসলাম। সরকারি চাকুরীজিবী রবিউল মেলার প্রসার দেখে অভিভূত প্রতিক্রীয়া জানিয়ে বলেন- নৌকা বাইচ ও মেলা ঘিরে এ অঞ্চলের মানুষের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ তৈরী হয়েছে। এখানে সব জাতিবর্ণ এক হয়ে গেছে। তবে তিনি নদীর দুপাড়ে দর্শনার্থীদের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে সেখানে অস্থায়ী প্রতিরোধ ব্যবস্থা তৈরীর সুপারিশ করেন। মেলায় আসা বে সরকারি কলেজ শিক্ষিকা রওশনারা বেগম জানান- বাইচের উদ্বোধন মাঝ নদীতে হওয়ায় অনেকেই এটি দেখতে ব্যার্থী হয়েছেন। একই সঙ্গে নৌকাগুলি বিচ্ছিন্নভাবে ছাড়াতে মানুষ প্রতিযোগিতার ফলাফল নিয়ে বিভ্রান্ত হয়েছেন। একই সঙ্গে নদীতে থাকা অতিথিদের লঞ্চগুলির নিরাপত্তা নিয়েও সচেতন থাকার পরামর্শ দেন।তবে মেলায় আসা দোকানিরা ভাল বেচাকেনা ও কোন প্রকার চাঁদার দৌরাত্ম না থাকায় স্বস্তি প্রকাশ করেন।
20211104_142806
বাহারি পণ্যের বাইচের মেলা
বাহারি পণ্য, খেলনা, বিভিন্ন রাইড ও হরেক রকমের মিষ্টির পসরা সাজিয়ে বসেছে দোকানীরা। গত ৮ বছর ধরে চলে আসা এ নৌকাবাইচ ও গ্রামীণ মেলা উপভোগ করতে মাগুরা, নড়াইল, ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ রাজবাড়ী, ঝিনাইদহসহ বিভিন্ন জেলার মানুষ ভীড় করে। করোনা মহামারির পর আনন্দঘণ ও উৎসব মূখর পরিবেশে আসতে পেরে সবাই আনন্দ প্রকাশ করেন। স্কুল ছাত্রী সুমাইয়া, সিথি, মৌসুমী, গৃহবধূ লোপামুদ্রাসহ একাধিক দর্শনার্থী নৌকা বাইচের মেলা থেকে নানা প্রকার কেনাকাটা ও খাবার খেয়ে আনন্দ প্রকাশ করেন। 20211104_151316

20211104_165016

জারি সারি গান ছিল বিশেষ আকর্ষণ
নৌকা বাইচকে ঘিরে নদীতে একটি বিশেষভাবে সজ্জিত নৌকা ছিল অন্যতম আকর্ষণ। বেশ কয়েকজন সুসজ্জিত কিশোরী নেচে গেয়ে জারিসারি গানের মাধ্যমে দর্শর্থীদের দৃষ্টি কাড়েন। এছাড়া নারী নৌকার বাইচালরাও বিশেষ আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হন। যা এ অঞ্চলের নারীর প্রগতি ও অগ্রগতির পরিচায়ক বলে মনে করেন স্থানীয়রা। 20211104_151719

প্রধান অতিথি সাবেক যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী ড.শ্রী বীরেন শিকদারের এমপি বলেন- তিনি যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী থাকা কালীন সময়ে দেশের আবহমান খেলাধুলার উন্নয়ন ও প্রসারে দেশব্যাপী ব্যাপক কর্মকান্ড গ্রহণ করেন। তারেই অংশ হিসেবে ২০১৩ সালে তিনি মহম্মদপুরে মধুমতি নদীতে প্রথম এ নৌকা বাইচ এর আয়োজন করেন। স্থানীয়দের প্রস্তাবনা ও সুপারিশে বাইচটির নামকরণ করা হয় তার বাবা বিশিষ্ট শিক্ষা ও ক্রীড়ানুরাগী বিহারী লাল শিকদারের নামে। এর পর থেকে স্থানীয় মানুষের উৎসাহ ও অনুপ্রেরণায় নৌকা বাইচটি এখন এ এলাকার মানুষের প্রাণের উৎসবে পরিণত হয়েছে।20211104_145838

অনুষ্ঠানের উদ্বোধক মাগুরার জেলা প্রশাসক ড. আশরাফুল আলম বলেন- করোনা পরবর্তী সময়ে মানুষকে কর্মময় জীবনে ফিরিয়ে আনতে এ নৌকা বাইচটি একটি অনন্য ভূমিকা পালন করছে। তিনি এ ধরনের আয়োজনে সার্বিক সহযোগিতার আশ্বাস দেন।

বিশেষ অতিথি মাগুরার পুলিশ সুপার মো: জহিরুল ইসলাম জানান- এ ধরনের বাইচের আয়োজনে মানুষের মধ্যে নির্মল চিত্ত বিনোদনের সুযোগ বাড়বে। ফলে সমাজে অপরাধ প্রবনতা কমে আসবে। তিনি জানান- এ ধরনের আয়োজনে সার্বিক নিরাপত্তা দিতে পুলিশ বাহিনী সদা তৎপর।

প্রতিযোগিতার ফলাফল
মহম্মদপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার রামানন্দ পালের সভাপতিত্বে সন্ধ্যায় পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন মহম্মদপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আবু আব্দুল্লাহেল কাফিসহ অতিথিবৃন্দ। এ বছর প্রতিযোগিতাকে নৌকার প্রকারভেদে টালাই ও কালাই নাদে দুটি গ্রুপে ভাগ করা হয়। টালাই গ্রুপে প্রথম স্থান অধিকার করে আকরাম হোসেন, ২য় হয় খাজা সরদার, ৩য় মনির হোসেন। অন্যদিকে কালাই গ্রুপে প্রথম হয় আয়ুব মোল্যা, ২য় মাসুম বিল্লাহ এবং ৩য় স্থান অধিকার করে আতিক মোল্যার নৌকা।
20211104_143337
সবিশেষ নিবেদন
নদী মাতৃক দেশের আনন্দ ও সংস্কৃতি প্রিয় মানুষ এ ধরনের নৌকা বাইচ এর মাধ্যমে নির্মল চিত্ত বিনোদনের সুযোগ বারবার পারে এমনটি আশা স্থানীয়দের।

রূপক /মাগুরা / 5 নভেম্বর ২০২১