রূপক আইচ, মাগুরা প্রতিনিধি
মাগুরায় ‘জমি নেই, ঘরও নেই’ প্রকল্পের আওতায় প্রথম পর্যায়ে আগামী ২৩ জানুয়ারী ১শ ১৫ জন ভূমিহীন পাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ উপহার টিনসেড আধা পাকা ঘর। আগামী শনিবার সারাদেশে একযোগে ৬০ হাজার গৃহহীন পরিবারের মাঝে জমিসহ এ ঘর হস্তান্তর করা হবে। ইতিমধ্যেই যার প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে মাগুরা সদরের হাজরাপুর ইউনিয়নের খালিমপুর গ্রামের ভূমিহীন দিনমজুর আক্কাস আলী নিজের জন্য তৈরী পাকা ঘরের দিকেচেয়ে দুচোখে জল ধরে রাখতে পারছেন না। সারাজীবন দিনে দিনমজুরী আর রাতে স্থানীয় বাজারে নৈশ প্রহরীর কাজ করে একফালি মাথা গোজার ঠাই কতে পারেননি তিনি। স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে অন্যের জমিতে ছাপড়া করে থাকেন তিনি। এ অবস্থায় নিজের একটি আধা পাকা মাথা গোঁজার ঠাই পেয়ে তিনি যেন আকাশের চাঁদ হাতে পেলেন। একই অবস্থা বিধবা জাহেদা বিবির। স্বামী জামির হোসেন মারা যাওয়ার পর সহায় সম্বলহীন জাহেদার দিন চলে মানুষের বাড়িতে বাড়িতে চেয়ে চিন্তে। মাথা গোঁজার ঠাই না থাকায় রাতের বেলায় অন্যের বাড়ির বারান্দায় ঠাই হয় তার। এ অবস্থায় মাগুরা সদরের হাজরাপুরে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর জমি নেই ঘরও নেই প্রকল্প থেকে একটি পাকা ঘর পেয়ে তার চোখেও আনন্দের অশ্রু। জীবনের শেষ সময়ে এ সুখের যেন কোন সীমা পরিসীমা নেই।
জায়েদা বেগম ও আক্কাস আলীর মত গৃহায়ন সুবিধা পাওয়া মানুষগুলির মুখে যেন ভাষা নেই। তারা এজন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, একটু জমি কিনে নিজের বা পরিবারের জন্য একটি বাড়ি করা তাদের জন্য ছিল আকাশ কুসুম কল্পনা। সে কল্পনাকে বাস্তব করে একটি পাকা ঘর তাদের জন্য দেয়া হয়েছে যা পেয়ে তারা খুবই খুশি। এ ঘরে মাথা গুজে শেষ জীবনে একটু শান্তিতে থাকতে পারবেন বলে তারা আল্লাহর কাছে হাজার শুকুর জানান।
তবে হাজরাপুর ইউনিয়নের অনেকেই ঘর প্রাপ্তির জন্য বাছাই প্রক্রিয়া আরো স্বচ্ছ করার আহবান জানিয়ে এ প্রকল্প আরও অসহায় মানুষের জন্য ঘর বরাদ্দের দাবী জানান। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বর আবু জাফর জানান- আমাদের এলাকায় এ ধরনের অনেক গরীব মানুষ রয়েছেন। তাদের জন্যও ঘর বরাদ্দের জন্য আমরা প্রশাসনের কাছে অনুরোধ জানাই।
স্থানীয় হাজরাপুর ইউনিয়ন পরিষদের মহিলা সদস্য নাজমা বেগম জানান- ভূমিহীন পরিবারের মধ্যে এসব বাড়ি বিতরণের অন্যতম শর্ত হলো স্বামী-স্ত্রী যৌথনামে এগুলির দলিল করে দেয়া হয়েছে। কখনো কখনো শুধু স্ত্রীর নামেও বাড়িগুলি দেয়া হচ্ছে। এর ফলে নারীর ক্ষমতায়ন আরো একধাপ এগিয়ে যাবে।
মাগুরার জেলা প্রশাসক ড. আশরাফুল আলম জানান- এ প্রকল্পের আওতায় মাগুরায় সরকারের ৮শ ঘর তৈরী করে দেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। ইতিমধ্যে যার ১১৫টি সম্পন্ন হয়ে হস্তান্তর উপযোগী হয়েছে। আগামী ২০ জানুয়ারী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী অনলাইনের মাধ্যমে এ ঘর হস্তান্তর করবেন। ইটের দেয়াল ও উপরে টিনের বেড়া দেয়া প্রতিটি ঘরে ২টি থাকার ঘর, একটি বারান্দা, একটি রান্নাঘর ও একটি পাকা বাথরুম সুবিধার ঘরগুলি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে অনুমোদিত। প্রতিটি ঘরের পেছনে খরচ হয়েছে ১লাখ ৭১ হাজার টাকা। এর মধ্যে মাগুরা সদরের ১৫টি, শালিখায় ৫০টি, মহম্মদপুরে ৩০টি ও শ্রীপুরে ২০টি ঘর ইতিমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ উদ্যোগ হিসেবে উন্নত সমৃদ্ধ দেশে শহরের সুবিধা সম্পন্ন গ্রাম গড়ে তোলা ও প্রান্তিক মানুষের গৃহায়ন সুবিধা নিশ্চিত করার এ উদ্যোগ সফল করার জন্য তিনি সকলকে আহবান জানান। দেশের মানুষের বাসস্থানের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করতে সরকারের এ প্রকল্প সাফল্য পাবে এমনটি আশা সংশ্লিষ্ঠদের।

রূপক/ মাগুরা /১৯ জানুয়ারী ২০২১