বিশেষ প্রতিনিধি, মাগুরাবার্তা
মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলার বিনোদপুর ইউনিয়নের পেয়াদাপাড়া গ্রামে প্রতিপক্ষের হামলায় এক ভ্যানচালক নিহতের ঘটনায় এলাকা পুরুষশুন্য হয়ে পড়েছে। প্রতিপক্ষের হামলা ভাঙচুর ও লুটপাটের আশঙ্কায় মালপত্র নিয়ে বাড়ি-ঘর ছেড়ে যাচ্ছেন গ্রামের লোকজন। ঘটনার তিনদিন পার হলেও বৃহস্পতিবার (২০ আগস্ট) দুপুর পর্যন্ত মামলা হয়নি।
সোমবার (১৭ আগস্ট) সন্ধ্যায় জমি নিয়ে পূর্ব বিরোধের জেরে ভ্যানচালক মাসুদ শেখকে (৩৫) কুপিয়ে গুরুতর জখম করে প্রতিপক্ষের লোকজন। গুরুতর আহত অবস্থায় ভ্যানচালককে উদ্ধার করে মাগুরা সদর হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। নিহত ওই ব্যক্তি পেয়াদা পাড়ার ইসমাইল শেখের ছেলে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, পেয়াদা পাড়া গ্রামের একটি অংশে কয়েকশ বসত বাড়িতে জনমানব নেই। ঘর-বাড়িতে তালা মারা। কয়েকটি বাড়ি বৃদ্ধ নারীরা পাহারা দিতে দেখা গেলেও তাঁরা কথা বলতে রাজি হননি। হত্যার খবর ছড়িয়ে পড়ার পর হামলা ভাংচুর আর লুটের ভয়ে আবার কেউ মামলার আসামী হবেন এই আশঙ্কায় গ্রাম ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছেন। কয়েকটি বাড়ির নারীদের দেখা গেছে আসবাবসহ গৃহস্থালী সামগ্রী ভ্যানযোগে অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। ইতিমধ্যে কয়েকটি বাড়ির মালপত্র লুট ও হামলা-ভাঙচুর হয়েছে বলে তারা দাবি করেন।
আসমা বেগম বেগম (৪৫) ও আমবিয়া বেগম (৩০) বাড়ির মালপত্র ভ্যানে করে নিয়ে অন্যত্র চলে যাচ্ছেন। জিজ্ঞাসা করলে তাঁরা জানান,‘বাড়ির বিটারা (পুরুষ) আগেই পলাইছে। কোনসুমা লুটপাট হবেনে এই ভয়ে মালপত্তর সরায় নিয়ে যাচ্ছি।’ শুধু আসমা ও আম্বিয়া একা নয়, ঘরের মালপত্র অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন অন্তত এমন পাঁচজনের সাথে কথা হয়েছে এ প্রতিবেদকের সাথে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, কবরস্থানের সীমানা নির্ধারণ নিয়ে পেয়াদা পাড়ার নুর মোহাম্মদ ও বিনোদপুর ইউনিয়ন পরিষদের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মো. কালাম শেখের সমর্থকদের মধ্যে বিরোধ চলছিল। বিষয়টি মীমাংসার জন্য মহম্মদপুর উপজেলা প্রশাসন ও মহম্মদপুর থানা-পুলিশ একাধিকবার দুপক্ষের মধ্যে সমঝোতার চেষ্টা করেছে। এরই মধ্যে নুর মোহাম্মদের সমর্থক মাসুদ শেখের আখের খেত নষ্ট করেন প্রতিপক্ষের লোকজন। এ বিষয়ে মহম্মদপুর থানায় একটি অভিযোগ করেন ভ্যানচালক মাসুদ শেখ। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে সোমবার (১৭ আগস্ট) সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে মাসুদ শেখের ওপর হামলা চালানো হয়। গুরুতর আহত অবস্থায় মাগুরা সদর হাসপাতালে নেওয়া হলে তিনি মারা যান।
এ বিষয়ে মহম্মদপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) তারক বিশ^াস বলেন, ‘ঘটনার পর থেকে এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করেছে। পুনরায় হামলার আশঙ্কায় পুলিশ সতর্ক অবস্থায় আছে। মামলার প্রস্তুতি চলছে।’

রূপক  /মাগুরা / ২০ আগস্ট ২০২০