রূপক আইচ, মাগুরাবার্তাটোয়েন্টিফোর.কম
একজন ডা. সুশান্ত কুমার বিশ্বাস। তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে দায়িত্ব পেয়ে যার ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় মাত্র ২ বছরে বদলে গেছে মাগুরা ২৫০ শয্যার হাসপাতালের পরিবেশ ও চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা। তিনি প্রমাণ করেছেন একাগ্রতা, নিষ্ঠা, টিম ওয়ার্ক ও সমন্বয় থাকলে অনেক বড় অসম্ভবকেও সম্ভব করে তোলা যায়। ৬ তলাবিশিষ্ট বিশাল অবকাঠামো নিয়ে মাগুরা ২৫০ শয্যার হাসপাতালটি চালু হওয়ার সাথে সাথে আমুল পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে এখানকার সুযোগ সুবিধা। ইতিমধ্যে হাসপাতালের ইমার্জেন্সির পুরো কার্যক্রম নতুন ভবনে চালু হয়েছে। সর্বাধুনিক সুযোগ সুবিধা নিয়ে চালু হয়েছে উন্নতমানের ল্যাবরেটরি মেডিসিন বিভাগ বা প্যাথলজি বিভাগ।

সদ্য চালু হওয়া প্যাথলজি বিভাগের মেডিকেল টেননিশিয়ান (ল্যাব) মোঃ ইসমাইল শেখ জানান- ইতিপূর্বে মাগুরা হাসপাতালের ল্যারেটরিতে তেমন কোন সুযোগ সুবিধা ছিল না। ফলে রোগীদের বাইরে থেকে বেশী টাকা খরচ করে অধিকাংশ পরিক্ষা নিরীক্ষা করতে হতো। বর্তমান তত্ত্বাবধায়ক ড. সুশান্ত কুমার বিশ্বাসের উদ্যোগে সরকারের সহযোগিতায় এখানে একটি অত্যাধুনিক এনালাইজার মেশিনসহ সরকারি অনেক সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি পাওয়ায় এখানে অধিকাংশ বায়োকিমিক্যাল টেস্ট সম্পন্ন করা সম্ভব হচ্ছে। এখানে বর্তমানে লিপিট প্রোফাইল, পিজি, এলডিএর, এইচডিএল, এ্যালকালাইন ফসফেট, এলজিপিডি, এসজিওডির মত ব্যায়বহুল পরিক্ষাও দ্রুত ও সাশ্রয়ী খরচে সম্পন্ন করা যাচ্ছে। তিনি জানান- বাইরে যে সকল পরিক্ষা নিরীক্ষা ৪ শ থেকে ২ হাজার টাকা পর্যন্ত নিয়ে থাকে। এখানে সেই পরিক্ষাগুলি ৫০ টাকা থেকে ৪শটাকার মধ্যে সম্পন্ন করা যাচ্ছে। এছাড়া এখানে রয়েছে্ বিশ্বের সর্বাধুনিক রেফ্রিজারেটর ব্যবস্থা। যার ফলে পরিক্ষার জন্য আনা কেমিক্যালগুলি সেখানে রক্ষণাবেক্ষণ করা হয় সর্বোচ্চ সতর্কতায়। যা বাইরে অনেক ক্ষেত্রেই অসম্ভব।

Magura Dr. Sushanta K Biswas 2
প্যাথলজিক্যাল ল্যাবে কর্মীদের কাজ পর্যবেক্ষণ করছেন ডা. সুশান্ত কুমার বিশ্বাস। – ছবি: মাগুরাবার্তা

এক সময়ের ময়লা আর্বজনা ও দুর্গন্ধে ভরা হাসপাতালটি এখন ঝকঝকে ত্বকতকে টাইলস লাগানো। ভেতরের ফুলবাগান থেকে আসছে ফুলের সুঘ্রান। সকাল ৮ বাজলেই চিকিৎসকরা ঢুকছেন হাসপাতাল ক্যাম্পাসে। কেউ যাচ্ছেন রাউন্ডে, কেউবা রোগি দেখছেন আউটডোরে বা সরকারি চেম্বারে। এক নাগাড়ে থাকতে হচ্ছে দুপুর দুইটা পর্যন্ত। অপারেশ থিয়েটার চালু থাকে নিয়মিত। ক’দিন আগেও ক্লিনিক, প্যাথলজি ওষুধের দোকানের দালালদের গায়ে ধাক্কা না খেয়ে ঢোকা যেত না সরকারি এ হাসপাতালে । এখন প্রায় দালাল মুক্ত মাগুরার এ হাসপাতালটি। কিন্তু রাতারাতি সব অনিয়ম অব্যাস্থাপনা দূর করে দৃশ্যপট পাল্টে যাওয়ার কারণ কি ? কোন যাদুতে এমনটি হলো?
জানাগেছে সম্প্রতি মাগুরা একশ’ শয্যার এ হাসপাতালটি ২৫০ শষ্যায় উন্নিত হয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী  ২০১৭ সালের ২১ মার্চ অনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেছেন প্রায় ২৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এ হাসপাতালটি। তবে কিছু কাজ বাকি থাকায় এখনো আড়াইশ’ বেডের পরিপূর্ণ কার্যক্রম শুরু হয়নি। শুধুমাত্র ইমার্জেন্সি ও প্যাথলজি বিভাগ নতুন ভবনে চালু হয়েছে। ৬ তলা বিল্ডিংয়ের ৩ তলাটি ব্যবহার হচ্ছে মাগুরা মেডিকেল কলেজ এর ক্লাসরুম ও অন্যান্য কাজে। নতুন বছরে ছাত্রছাত্রী ইতিমধ্যে ভর্তিও হয়ে গেছে।  বর্তমানে এ হাসপাতালে গড়ে প্রতিদিন তিনশ’ রোগি ভর্তি থাকছে। জরুরী বিভাগ ও আউটডোরে চিকিৎসা নিচ্ছে দুই থেকে আড়াই হাজার রোগি।

২০১৭ সালের ৯ মার্চ সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা. সুশান্ত কুমার বিশ্বাসকে ২৫০ শষ্যা এ হাসপাতালের তত্ত্ববধায়ক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয় । এ নিয়োগের পর থেকেই আমুল পাল্টে যেতে থাকে গোটা হাসপাতালের চিত্র। তিনি হাসপাতালের চিকিৎসকসহ সকল বিভাগের কর্মকর্তা কর্মচারীদের নিজ-নিজ দায়িত্ববোধ সম্পর্কে সচেতন করেছেন। স্বাস্থ্য বিভাগের  উর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও জেলার শীর্ষ নেতৃবৃন্দ জনপ্রতিনিধিদের নির্দেশনা ও অকুন্ঠ সহযোগিতায় তিনি সরকারি এ হাসপাতালে শতভাগ স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করার জন্য জিরো ট্রলারেন্স নীতি অবলম্বন করেছেন। সে মোতাবেক দায়িত্ব অবহেলাকারীর বিরুদের কঠোর অবস্থান নিয়েছেন। যে কারনে হাসপাতালের পরিস্কার পরিচ্ছনা নিশ্চিত হয়েছে। চিকিৎসক, কর্মকর্তা কর্মচারীরা সময় মত হাসপাতালে উপস্থিত থেকে দায়িত্ব পালন করছেন। শিশু ও মায়েদের সুবিধার জন্য ব্রেস্ট ফিডিং কর্ণারসহ পুরো হাসপাতালে এনেছেন উন্নয়নের ছোঁয়া।

পুলিশ দিয়ে হাসপাতাল থেকে দালাল মুক্ত  করার কার্যক্রম চলছে। এ ছাড়া হাসপাতালের রোগী ও চিকিৎসায় নিয়োজিত ডাক্তাও নার্সদের নিরাপত্তার জন্য পুলিশ অথবা আনসার সদস্যদের নিয়োগের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। নানা কারনে গোটা হাসপাতালে চিত্রই এখন পাল্টে গেছে।
ডা: সুশান্ত কুমার বিশ্বাস বলেন, সর্বস্তরের মাগুরাবাসীর সহযোগিতা, জেলা প্রশাসন, যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী ড. শ্রী বীরেন শিকদার এমপি, মহিলা সংসদ সদস্য কামরুল লায়লা জলি ও নবনির্বাচিত সংসদ সদস্য জনাব সাইফুজ্জামান শিখরের দিক নির্দেশনায় মাগুরার এ হাসপাতালটিকে সুন্দরভাবে গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়ে তিনি প্রাথমিক সফলতা অর্জন করেছেন। তার সাথে বিএমএর সাধারণ সম্পাদক ও আবাসিক মেডিকল অফিসার, স্থাস্থ্য বিভাগ ও সর্বস্তরের মাগুরাবাসীর অকুণ্ঠ সহযোগিতা করছেন।

ডা: সুশান্ত আরও জানান, অল্প সময়ের মধ্যে মাগুরা ২৫০ শয্যার কার্যক্রম পূর্ণাঙ্গভাবে চালু হবে। অত্যাধুনিক এ হাসপাতালে থাকবে ৫টি ওটি একটি করোনারী কেয়ার ইউনিট, সেন্ট্রাল অক্সিজেন ও ওয়াটার সাপ্লাই, একাধিক লিফটসহ নানা সুয়োগ সুবিধা।

মাগুরা /৫ জানুয়ারী ১৯