ওয়েব ডেস্ক, মাগুরাবার্তাটোয়েন্টিফোর.কম
পাঁচ শতাংশ সুদে সরকারি চাকরিজীবীদের গৃহনির্মাণ ঋণ কার্র্যক্রম আগামী ১ অক্টোবর থেকে শুরু হচ্ছে। এই সময় থেকেই সরকারি কর্মচারীরা ব্যাংক থেকে গৃহঋণ পাওয়ার জন্য আবেদন করতে পারবেন। এ সম্পর্কিত ওয়ার্কিং কমিটির এক বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে। অর্থ বিভাগের একজন যুগ্ম সচিবের নেতৃত্বে গঠিত কমিটির প্রথম বৈঠক গত মঙ্গলবার সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত হয়। সভায় বলা হয় আগামী সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যেই পাঁচটি সরকারি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সাথে অর্থ মন্ত্রণালয় এ ব্যাপারে একটি করে সমঝোতা স্মারক সই করবে।

সরকারি এই আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে- সোনালী, জনতা, অগ্রণী ও রূপালী ব্যাংক এবং বাংলাদেশ হাউজ বিল্ডিং ফাইন্যান্স করপোরেশন। এ ঋণে সরল সুদহার হবে ১০ শতাংশ। এই সুদের ৫ শতাংশ ভর্তুকি হিসাবে দেবে সরকার, বাকি ৫ শতাংশ বহন করবে ঋণগ্রহীতা। কোনো সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে ঋণ নেয়ার জন্য অনুমোদিত প্রতিষ্ঠান পছন্দ করার আগে অর্থ বিভাগের অনুমতি নিতে হবে। আবেদনকারী কর্মচারীরা জাতীয় পরিচয়পত্র, চাকরির স্থায়ীকরণপত্র, বেতনের রসিদ, সম্ভাব্য পেনশন থেকে আয়, ব্যাংকের হিসাব বিবরণ এবং অন্য ব্যাংক থেকে যদি কোনো ঋণ নেয়া থাকে তার বিবরণ আবেদনের সাথে দিতে হবে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের একটি সেল এ বিষয়টি মনিটর করবে। অনলাইনে মনিটরিং সেলে ঋণের আবেদন করতে হবে।

এর আগে গৃহনির্মাণ ঋণের জন্য শতকরা ৫ শতাংশ সুদ হার নির্ধারণ করে গত ৩১ জুলাই এক প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। প্রজ্ঞাপন অনুসারে জাতীয় বেতন স্কেলের গ্রেড ভেদে সর্বোচ্চ ৭৫ লাখ এবং সর্বনিম্ন ২০ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ নিতে পারবেন একজন সরকারি চাকরিজীবী। ছয় মাস (ফ্যাট ক্রয়ের ক্ষেত্রে) থেকে এক বছরের (বাড়ি নির্মাণ) গ্রেস পিরিয়ডসহ (এই সময়ের মধ্যে ঋণের কিস্তি পরিশোধ করা লাগবে না) ২০ বছর মেয়াদে এ ঋণ পরিশোধ করতে হবে।

তবে কোনো সরকারি চাকুরের বিরুদ্ধে কোনো বিভাগীয় বা দুর্নীতি মামলা থাকলে সেই মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত এই ঋণ পাবেন না। প্রসঙ্গত সাধারণ জনগণ গৃহনির্মাণের জন্য কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে যদি ঋণ নেন তবে তাকে ১০ শতাংশের বেশি সুদ গুনতে হয়।

বর্তমানে ১০ শতাংশ সুদহারে একজন সরকারি কর্মচারী সর্বোচ্চ ঋণ পান এক লাখ ২০ হাজার টাকা। কিন্তু নতুন নীতিমালা অনুযায়ী উপসচিব থেকে সচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তা, জাতীয় বেতন স্কেলের পঞ্চম থেকে প্রথম গ্রেডভুক্তরা ৭৫ লাখ টাকা পর্যন্ত ২০ বছর মেয়াদি এ ঋণ নিয়ে বাড়ি নির্মাণ কিংবা ফ্যাট ক্রয় করতে পারবেন। সর্বনিম্ন ১৮ থেকে ২০তম গ্রেডের কর্মচারীরা ঢাকাসহ সব সিটি করপোরেশন এবং বিভাগীয় সদরে ৩০ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ সুবিধা পাবেন। চাকরি স্থায়ী হওয়ার পাঁচ বছর পর থেকে এ ঋণ নেয়া যাবে। সর্বোচ্চ ৫৬ বছর বয়স পর্যন্ত এ ঋণ নেয়া যাবে।

জাতীয় বেতন কাঠামোর পঞ্চম গ্রেড থেকে প্রথম গ্রেডভুক্ত কর্মকর্তা- যাদের বেতন স্কেল ৪৩ হাজার টাকা বা তার বেশি তারা প্রত্যেকে ঢাকাসহ সব সিটি করপোরেশন ও বিভাগীয় সদরে গৃহনির্মাণে ঋণ পাবেন ৭৫ লাখ টাকা। জেলা সদরে ৬০ লাখ টাকা এবং অন্যান্য এলাকায় ৫০ লাখ টাকা।

বেতন কাঠামোর নবম গ্রেড থেকে ষষ্ঠ গ্রেড পর্যন্ত বা যাদের মূল বেতন ২২ হাজার থেকে ৩৫ হাজার ৫০০ টাকা, তারা ঢাকাসহ সব সিটি করপোরেশন এবং বিভাগীয় সদর এলাকায় ৬৫ লাখ, জেলা সদরে ৫৫ লাখ এবং অন্যান্য এলাকায় ৪৫ লাখ টাকা ঋণ পাবেন।

দশম থেকে ১৩তম গ্রেড পর্যন্ত যাদের মূল বেতন ১১ হাজার থেকে ১৬ হাজার টাকা তারা ঢাকাসহ সব সিটি করপোরেশন ও বিভাগীয় সদরে ৫৫ লাখ টাকা, জেলা সদরে ৪০ লাখ এবং অন্যান্য এলাকার জন্য ৩০ লাখ টাকা ঋণ পাবেন।
১৪ থেকে ১৭তম গ্রেড বা ৯ হাজার থেকে ১০ হাজার ২০০ টাকা বেতন স্কেলে ঢাকাসহ সব সিটি করপোরেশন ও বিভাগীয় সদরে ৪০ লাখ, জেলা সদরে ৩০ লাখ টাকা এবং অন্যান্য এলাকায় ২৫ লাখ টাকা ঋণ পাবেন। ১৮ থেকে ২০তম গ্রেড বা আট হাজার ২৫০ থেকে আট হাজার ৮০০ টাকা পর্যন্ত মূল বেতন পান এমন কর্মচারীরা ঢাকাসহ সব সিটি করপোরেশন ও বিভাগীয় সদরে পাবেন ৩০ লাখ টাকা। জেলা সদরে এটি হবে ২৫ লাখ টাকা এবং অন্যান্য এলাকায় পাবেন ২০ লাখ টাকা।

সরকারের আওতাধীন মন্ত্রণালয়, বিভাগ, অধিদফতর, পরিদফতর ও কার্যালয়গুলোতে স্থায়ী পদের বিপরীতে নিয়োগপ্রাপ্ত বেসামরিক কর্মচারীরাও এ সুবিধা পাবেন। সামরিক, রাষ্ট্রায়ত্ত ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন কোম্পানি, পৃথক বা বিশেষ আইনে সৃষ্ট প্রতিষ্ঠানে নিযুক্ত কর্মচারীরা এ ঋণ সুবিধার আওতাভুক্ত হবেন না। অবশ্য রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ব্যাংক থেকে এ ধরনের গৃহনির্মাণ ঋণ সুবিধা পেয়ে থাকেন।

এ হিসাবে সরকারের প্রায় ১২ লাখ কর্মকর্তা-কর্মচারী গৃহনির্মাণ ঋণ সুবিধা পাবেন। তারা এককভাবে এ ঋণ নিতে পারবেন। আবাসিক বাড়ি করার জন্য গ্রুপভিত্তিক ঋণও নেয়া যাবে। ফ্যাট কেনার জন্যও এ ঋণ সুবিধা পাওয়া যাবে। তবে ফ্যাট হতে হবে সম্পূর্ণ প্রস্তুত অর্থাৎ রেডি ফ্যাট। অবশ্য সরকারি সংস্থার নির্মাণ করা ফ্ল্যাট কেনার ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ রেডি ফ্ল্যাটের শর্ত শিথিল করা যাবে।

তবে কোনো সরকারি কর্মচারীর বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা রুজু এবং দুর্নীতি মামলার চার্জশিট দাখিল হলে মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যান্ত এ ঋণের যোগ্য বিবেচিত হবেন না। পাশাপাশি সরকারি চাকরিতে চুক্তিভিত্তিক, খণ্ডকালীন ও অস্থায়ী ভিত্তিতে নিযুক্ত কোনো কর্মচারীও এ ঋণ পাওয়ার যোগ্য হবেন না।

নীতিমালায় আরো বলা হয়েছে, কোনো কর্মচারী ঋণ নেয়ার পর স্বেচ্ছায় চাকরি ছাড়লে বা বাধ্যতামূলক অবসর, বরখাস্ত বা চাকরিচ্যুত হলে আদেশ জারির তারিখ থেকে ঋণের অবশিষ্ট মেয়াদের জন্য সুদ বাবদ সরকার কোনো ভর্তুকি দেবে না। এ ক্ষেত্রে ঋণের অপরিশোধিত অর্থ সংশ্লিষ্ট কর্মচারীর পেনশন সুবিধা বা আনুতোষিক সুবিধা থেকে আদায় করা হবে। ঋণগ্রহীতার মৃত্যু হলে তার পারিবারিক পেনশন ও আনুতোষিক সুবিধা থেকে যতটুকু সম্ভব ঋণ পরিশোধ করা হবে। এর পরও ঋণ পাওনা থাকলে উত্তরাধিকারদের কাছ থেকে তা আদায় করা হবে।

ঋণের সর্বোচ্চ সিলিং নির্ধারণ সম্পর্কে নীতিমালায় বলা হয়েছে, বেতন স্কেল অনুযায়ী সর্বোচ্চ যে সিলিং সরকার নির্ধারণ করে দেবে, সেটিও বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠানের যথাযথ পদ্ধতিতে যে পরিমাণ ঋণ সুবিধা নির্ধারণ করা হবে তার মধ্যে যেটি কম সে পরিমাণ ঋণ পাবেন। ফ্যাট কেনা বা নিজস্ব জমিতে বাড়ি নির্মাণের ক্ষেত্রে ঋণ দেয়ার জন্য ডেট ইক্যুইটি রেশিও (অনুপাত) হবে ৯০:১০। অর্থাৎ ফ্যাট কেনা বা নিজস্ব জমিতে বাড়ি নির্মাণের জন্য কেউ নিজস্ব উদ্যোগে ১০ টাকা খরচ করলে তিনি ৯০ টাকা ঋণ পাবেন।

ঋণের সুদ সম্পর্কে নীতিমালার ৭(ঘ) ধারায় বলা হয়েছে, ‘সরকারি কর্মচারীদের গৃহনির্মাণ ঋণের সুদের হার হবে সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ। এটি হবে সরল সুদ এবং সুদের ওপর কোনো সুদ আদায় করা হবে না। ঋণগ্রহীতা কর্মচারী ব্যাংক রেটের সমহারে (বর্তমানে যা ৫ শতাংশ) সুদ পরিশোধ করবেন। সুদের অবশিষ্ট অর্থ সরকার ভর্তুকি হিসেবে প্রদান করবে।’

নীতিমালার ৪ ধারায় ঋণ পাওয়ার শর্ত হিসেবে বলা হয়েছে, একজন সরকারি কর্মচারী দেশের যেকোনো এলাকায় গৃহনির্মাণ বা ফ্ল্যাট কেনার জন্য ঋণ গ্রহণ করতে পারবেন। গৃহনির্মাণ বা ফ্ল্যাট কেনার ক্ষেত্রে ভবনের নকশা উপযুক্ত কর্তৃপরে অনুমোদিত হতে হবে। যে জমি বা ফ্যাট কেনা হবে, তা সম্পূর্ণ দায়মুক্ত হতে হবে। ঋণদানকারী ব্যাংক বা বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান নির্ধারিত ব্যাংকে আবেদনকারীর একটি হিসাব থাকবে। ওই হিসাবের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট কর্মচারীর বেতনভাতা, পেনশন ও গৃহনির্মাণ বা ফ্ল্যাট ক্রয় ঋণ বিতরণ ও আদায়ের পুরো কার্যক্রম পরিচালিত হবে। রেডি ফ্যাট কেনার ক্ষেত্রে ঋণের পুরো অর্থ এক কিস্তিতে ছাড় করবে ব্যাংক। গৃহনির্মাণের ক্ষেত্রে ঋণের টাকা চার কিস্তিতে ছাড় করা যাবে।

নীতিমালা অনুযায়ী, গৃহনির্মাণ ঋণ দেয়ার আগে যে সম্পত্তিতে ঋণ দেয়া হবে, তা ঋণদাতা প্রতিষ্ঠান বরাবর রেজিস্টার্ড দলিলমূলে বন্ধক রাখতে হবে। বাস্তুভিটায় বাড়ি করার ক্ষেত্রে ঋণগ্রহীতার মালিকানাধীন অন্য কোনো সম্পত্তি বন্ধক রাখা যাবে। এ ঋণ পরিশোধের মেয়াদ হবে ২০ বছর।

গৃহনির্মাণের প্রথম কিস্তি ঋণের অর্থ পাওয়ার এক বছর পর, ফ্যাট কেনার ক্ষেত্রে ঋণের অর্থ পাওয়ার ছয় মাস পর থেকে ঋণগ্রহীতা মাসিক কিস্তিতে ঋণ পরিশোধ শুরু করবেন। কোনো কারণে মাসিক কিস্তি পরিশোধে দেরি হলে বিলম্বের জন্য আরোপযোগ্য সুদ শেষ কিস্তির সঙ্গে যুক্ত হবে। যে ব্যাংক ঋণ দেবে, সেই ব্যাংকে তার মাসিক বেতনের হিসাব খুলতে হবে। তার বেতনভাতা ওই হিসাবে জমা হবে।

ব্যাংক সেখান থেকে প্রথমে মাসিক ভিত্তিতে কিস্তির টাকা কেটে নেবে। পরে ঋণগ্রহীতা বেতনভাতার বাকি অর্থ হিসাব থেকে তুলতে পারবেন। ঋণগ্রহীতা অন্যত্র বদলি হলে তার হিসাবও সেখানে একই ব্যাংকের কোনো শাখায় স্থানান্তর করে নিতে হবে বলে প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছে।