মাগুরার অন্যতম প্রাচীণ বিদ্যাপিঠ সরকারি হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ। আগামী ৫ মার্চ কলেজের প্রাক্তন ও বর্তমান ছাত্ররা পালন করতে যাচ্ছেন কলেজের ৭৫ বছর পূর্তি উৎসব।  হীরক জয়ন্ত’র এ উৎসবকে সফল করতে মূল আয়োজকবৃন্দ ও বিভিন্ন ব্যাজের ছাত্র-ছাত্রীদের মাঝে সাঁজ সাঁজ রব শুরু হয়েছে। মাগুরার ঐতিহ্যবাহী এ প্রতিষ্ঠানটির আদ্যপান্ত ইতিহাস নিয়ে মাগুরাবার্তা লিখেছেন এ কলেজের দর্শন বিভাগের প্রভাষক খান শফি উল্লাহ৩ পর্বের ধারাবাহিকের আজ প্রকাশ করা হলো প্রথম পর্ব……. 

মাগুরা সরকারি হোসেন শহীদ সরকারি কলেজের প্রথম বহুতল ভবন
মাগুরা সরকারি হোসেন শহীদ সরকারি কলেজের প্রথম বহুতল ভবন

যেভাবে হলো মাগুরা সরকারি হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দি কলেজ এর যাত্রা………..

ইতিহাস ভবিষ্যতের দর্পন আর আগামী দিনের সামনে চলার অনুপ্রেরণা। অতীত উপলব্ধি বর্তমানকে চেনায় এবং ভবিষ্যৎ সমাজ বিনীর্মাণের স্বপ্ন পুরণে পথ দেখায়। দেশের দক্ষিণ বঙ্গের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত প্রাচীনতম এবং ঐতিহ্যবাহী সর্ববৃহৎ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে সরকারি হেসেন শহীদ সোহ্রাওয়ার্দী কলেজ, মাগুরা ইতিহাসের অতীত উপলব্ধি এবং বর্তমান ও ভবিষ্যৎ সমাজ বিনীর্মাণের স্বপ্ন সিঁড়ি।

ইতিহাস থেকে জানা যায়, মাগুরার জনপদ ছিল কুসংস্কার ও অন্ধকারাচ্ছন্ন। অনগ্রসর, অবহেলিত এবং আধুনিক শিক্ষা-সভ্যতার ছোঁয়া থেকে বঞ্চিত। কুসংস্কার বেষ্টিত অবহেলিত ও বঞ্চিত অনগ্রসর মাগুরাবাসির অন্ধকরাচ্ছন্ন অন্তর আলোকিত করার প্রত্যয়ে মাগুরার বুকে প্রতিষ্ঠিত হয় একটি বিদ্যানিকেতন। যা আজকের সরকারি হেসেন শহীদ সোহ্রাওয়ার্দী কলেজ, মাগুরা।

১৯৩৮ সাল। তৎকালীন মাগুরা মহকুমার অন্যতম বিদ্যাপীঠ মাগুরা আব্দুল গনি হাই মাদ্রাসা (বর্তমানে মাগুরা এ.জি. একাডেমি)। এ সময়ে এই মাদ্রাসায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্র স্বর্ণপদক প্রাপ্ত মৌলভী মোঃ মোখলেছুর রহমান সুপারিনটেন্ডন্ট হিসেবে যোগদান করেন।

একজন মৌলভী মোঃ মোখলেছুর রহমান

মৌলভী মোঃ মোখলেছুর রহমান ১৯২৭ সলে প্রবেশিকা পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হয়ে ঢাকা ইসলামিক ইন্টারমিডিয়েট কলেজে ভর্তি হন এবং ১৯২৯ সালে উচ্চমাধ্যমিকে (ইসলামিক) প্রথম শ্রেণীতে প্রথম হন। পরবর্তিতে ১৯৩২ সালে ঢাকা বশ্ববিদ্যালয় হতে বি.এ. (অনার্স) প্রথম বিভাগে দ্বিতীয় এবং ১৯৩৪ সালে ইসলামিক স্টাডিজে প্রথম বিভাগে প্রথম হয়ে এম.এ ডিগ্রি লাভ করেন। জনাব মোখলেছুর রহমান ছিলেন নোয়াখালী জেলার বেগমগঞ্জ উপজেলার ঘাটলা গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারের সন্তান।

মৌলভী মোঃ মোখলেছুর রহমান অনেকটা স্বেচ্ছা নির্বাসিত হয়ে মাগুরাতে কর্ম জীবন এবং স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। মিশে যান মাগুরার মাটি আর মানুষের সাথে। গড়ে তোলেন গভীর সখ্যতা। একটি সোনালী স্বপ্নে তিনি বিভোর হয়ে পড়েন। আলোকিত মানুষ গড়ার স্বপ্ন। এ সময় মাগুরার মানুষের শিক্ষানুরাগ দেখে তিনি একদিকে যেমন অভিভূত ও আন্দোলিত হন, অন্যদিকে তেমনি উদ্দীপ্ত হন। স্বপ্ন দেখেন আলোকিত মাগুরা গড়ার ফ্যাক্টরি হিসেবে একটি আধুনিক কলেজ প্রতিষ্ঠার।

Magura Barta 1

ত্রিশ দশকের কথা। মাগুরার সাধারণ মানুষ যেমন ছিলেন সহজ-সরল, তেমন কিছুটা কুসংস্কারাচ্ছন্ন। এ সময়কার অধিকাংশ মুসলিম পরিবারই মাগুরা হাই ইংলিশ স্কুলকে (বর্তমান সরকরি উচ্চ বিদ্যালয়) বিধর্মীদের স্কুল হিসেবে ভাবতেন। ফলে তাঁদের ছেলে-মেয়েকে ঐ স্কুলে ভর্তি করতে অনিহা দেখাতেন। মাগুরা আব্দুল গনি হাই মাদ্রাসাই ছিল মাগুরার মুসলমানদের একমাত্র পছন্দের বিদ্যাপীঠ। কিন্তু হাই মাদ্রাসা থেকে পাশ করে মুসলমান ছাত্রদের উচ্চশিক্ষা গ্রহণের তেমন কোন সুযোগ ছিল না। কেননা হাই মাদ্রাসার পরবর্তী স্তরের শিক্ষা ইসলামিক ইন্টারমিডিয়েট পড়ার সুযোগ ছিল তৎকালীন অবিভক্ত বাংলার সিরাজগঞ্জ, ঢাকা, হুগলী এবং আসাম প্রদেশের সিলেটে। ভৌগলিক অবস্থানগত কারণে এ সব স্থানের অবস্থান ছিল মাগুরা থেকে অনেক দূরে। মাগুরা থেকে এ সব স্থানে গিয়ে লেখাপড়া করা ব্যয়বহুল এবং কষ্টসাধ্য ছিল।

magurabarta24.com 1

মাগুরাবাসির উচ্চশিক্ষার সুযোগ যাতে সহজতর হয় সেই উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ১৯৪০ সালে মাগুরা আব্দুল গনি হাই মাদ্রাসা ভবনের উত্তর এবং দক্ষিণ দিকে (পুরাতন প্রশাসনিক ভবন যে ভবনটি ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে এবং শহীদ মিনার সংলগ্ন স্থান) দু’টি দোচালা টিনের ঘর তৈরী করে প্রতিষ্ঠিত হয় মাগুরা ইসলামিক ইন্টারমিডিয়েট কলেজ। এই কলেজের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ হন মৌলভী মোঃ মোখলেছুর রহমান।

(চলবে) আগামী পর্বে পড়ুন যাদের প্রচেষ্টা ও সহযোগিতায় কলেজটি প্রতিষ্ঠা পায়…….