বিশেষ প্রতিনিধি, মাগুরাবার্তাটোয়েন্টিফোর.কম
সদর উপজেলা যাচাই বাছাই কমিটি থেকে জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মোল্যা নবুয়ত আলীর নাম বাদ দেয়ায় মাগুরায় যাচাই বাছাই প্রক্রিয়া বয়কট করেছে সদর উপজেলা কমিটির ৪ সদস্য। ফলে শনিবার থেকে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই শুরুর কথা থাকলেও তা  সম্ভব হয়নি। এতে বাছাইয়ের জন্যে আসা অনেক মুক্তিযোদ্ধাই ফিরে গেছেন। কবে নাগাদ এ অবস্থার উত্তোরণ হবে তা জানা যায়নি।

শুক্রবার জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা)এর মহা পরিচালক (ডিজি) পূণ্যব্রত চৌধুরীর দপ্তর থেকে আসা এক ফ্যাক্স বার্তায় জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মোল্যা নবুয়ত আলীর নাম বাদ দিয়ে ৬ সদস্যের যাচাই বাছাই কমিটি পাঠালে এ অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়।

সকাল থেকে মো: আরব আলী, মো: মশিউর রহমান, মো: আমজাদ হোসেন, মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রাজ্জাক লস্করের পরিবার, মুক্তিযোদ্ধা লুৎফর রহমানের পরিবার, মোজাম্মেল হোসেনসহ কয়েকশ মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের পরিবারের লোকজন সদর উপজেলা পরিষদে এসে যাচাই বাছাই বন্ধ থাকার কারণে বাড়ি ফিরে যেতে বাধ্য হন।

কমিটির সদস্য মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের সদস্য যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা এসএম আব্দুর রহমানসহ একাধিক সদস্য অভিযোগ করেন- উপজেলা পর্যায়ে ৭সদস্যের কমিটি এ যাচাই বাছাই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে থাকেন। মাগুরা সদর উপজেলা কমিটিতে সভাপতি হিসেবে আছেন মাগুরা-১ আসনের সংসদ সদস্য মেজর জেনারেল অবসরপ্রা্প্ত এটিএম আব্দুল ওয়াহহাব, সদস্য সচীব পদে সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইয়ারুল ইসলাম, সদস্য হিসেবে রয়েছেন জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মোল্যা নবুয়ত আলী, জামুকার প্রতিনিধি আবু নাসির বাবলু, সদর উপজেলা কমান্ডার জহুরে আলম, কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের পক্ষে তিনি নিজে ও মুক্তিযোদ্ধা মুন্সি আব্দুর রউফ। এ কমিটিতে জেলা কমান্ডারের  পদটি বরাবরই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে আসছে । হঠাৎ করে মাগুরা জেলা কমান্ডের সাথে কোন প্রকার আলোচনা ছাড়াই শুক্রবার এক ফ্যাক্সবার্তায় জেলা কমান্ডারকে বাদ দিয়ে ৬ সদস্যের একটি যাচাই বাছাই কমিটি আসে। এর ফলে যাচাই বাছাই প্রক্রিয়া বিঘ্নিত হবে। এ পরিস্থিতিতে আমরা ওই কমিটির বাকি চার সদস্য যাচাই বাছাই কার্যক্রমে অংশ নেইনি।

এ বিষয়ে জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মোল্যা নবুয়ত আলীর কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান- মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাইয়ের কমিটিতে জেলা কমান্ডার অথবা তার মনোনিত প্রতিনিধি উপস্থিত থাকেন। এটিই দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে। হঠাৎ কি কারণে আমার নাম বাদ দিয়ে কমিটি গঠন করা হলো এ বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। তবে তিনি বিষয়টিতে মাগুরা-১ আসনের সংসদ সদস্য মেজর জেনারেল এটিএম আব্দুল ওহাবের সম্পৃক্ততা থাকতে পারার ইঙ্গিত দেন।

এ বিষয়ে মেজর জেনারেল (অব:) এটিএম আব্দুল ওয়াহহাবের কাছে জানতে চাইলে তিনি এ বিষয়ে কিছুই জানেন না দাবী করে জানান- মোল্যা নবুয়ত আলীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন কথা প্রচলিত রয়েছে। মোল্যা নবুয়ত আলী তার স্ত্রী ও বোনসহ বিভিন্ন জনের নামে মুক্তিযোদ্ধার ভাতা করে দিয়েছেন বলে তিনি শুনেছেন দাবী করে তিনি বলেন এসব কারণে মোল্যা নবুয়ত আলীর বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকতে পারে।

তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক এলাকাবাসির সাথে কথা বলে অনেকেই দাবী করেছেন – শ্রীপুরের শ্রীকোল ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান কুতুবুল্লাহ হোসেন মিয়া কুটি ও বর্তমান চেয়ারম্যান মোল্যা নবুয়ত আলীর ছেলে মুস্তাসিম বিল্লাহ সংগ্রামের সমর্থকদের মধ্যে সাম্প্রতিক হামলা পাল্টা হামলার ঘটনায় এমপি এটিএম আব্দুল ওয়াহহাব মোল্যা নবুয়ত আলীর উপর ক্ষুব্ধ হয়ে মন্ত্রনালয়ে যোগাযোগ করে মোল্যা নবুয়ত আলীর নাম কমিটি থেকে বাদ দিয়েছেন। এমপি ওহাব সাবেক চেয়ারম্যান কুটি মিয়ার আত্মিয় বলে পরিচিত।

এ বিষয়ে কমিটির সদস্য সচীব ও সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইয়ারুল ইসলাম জানান- কমিটির সদস্যরা উপস্থিত না হওয়ায় শনিবার যাচাই বাছাই করা সম্ভব হয়নি। এ ব্যাপারে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। আশা করছি দ্রুত বিষয়টি নিস্পত্তি হয়ে যাবে।

রূপক আইচ/মাগুরা/১১ ফেব্রুয়ারী১৭