বিশেষ প্রতিনিধি, মাগুরাবার্তাটোয়েন্টিফোর.কম
মাগুরা সদর উপজেলাকে ভিক্ষুক ও বাল্য বিবাহমুক্ত ঘোষণা মঞ্চেই ভিক্ষা চাইল আনেসা বেগম।

শনিবার (২৮ জানুয়ারী) দুপুরে সদরের হাজিপুর ইউনিয়ন পরিষদের হাজিপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয় চত্বরে অনুষ্ঠিত এক সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে খুলনা বিভাগীয় কমিশনার মো: আব্দুস সামাদ এ ঘোষণা দেয়ার সময় ও বাবা তোমরা আমারে কয়ডা টাহা দিয়ে যাও বলে চিৎকার করে ওঠে আনেসা বেগম।

এদিকে ঘোষণা মঞ্চেই ভিক্ষা চেয়ে উপস্থিত অতিথিদের বিড়ম্বনায় ফেলে দিয়েছে হাজিপুরের ফুলবাড়ি গ্রামের ওই ভিক্ষুক । এ ঘটনায় বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে নেয়া লাখ লাখ টাকা খরচের ওই কর্মসূচীর বাস্তবায়ন নিয়েই কানাঘুষা শুরু করেন উপস্থিত দর্শকরা।

অনুষ্ঠান মঞ্চে থেকে বক্তব্যের এক পর্যায়ে বিভাগীয় কমিশনার যখন ভিক্ষুকদের উদ্দেশ্যে হাত উচু করে –  আর ভিক্ষা করবো না   বলে শপথ নিতে বলেন। ঠিক সে সময় আনেছা বেগম  ‘ও বাবা তোমরা আমারে কয়ডা টাকা দিয়ে যাও’  (ভিডিও সংযুক্ত) বলে  জোরে জোরে চিৎকার করে ভিক্ষা চেয়ে ওঠেন। এ সময় উপস্থিত কর্মকর্তারা বিব্রত হয়ে দ্রুত আনেসাকে সরিয়ে দেন।

এদিকে ভিক্ষুক মুক্ত করার নামে প্রশাসনের এ  কর্মসূচীর সমালোচনা করেছেন খোদ ভিক্ষুকরাই।  তাদের দাবী সরকার যে ধরণের সহযোগিতা দিচ্ছেন তাতে তাদের ভিক্ষা করা ছাড়া কোন উপায় থাকবে না। ভিক্ষা করলে তাদেরকে আটক করা হবে বলে তাদেরকে জানিয়ে দেয়া হয়েছে। এখন তাদের উপর হয়রানি সৃষ্টি হবে বলেই তারা আশংকা প্রকাশ করেন।

Magura Vikkhuk Mukto Pic 1

শ্রীরামপুর গ্রামের ভিক্ষুক আমেনা বেগম ও তার স্বামী হালিম শিকদার, একই এলাকার আলী আহম্মেদ মোল্যা, আনসার উদ্দিনসহ একাধিক ভিক্ষুক জানান- প্রাণের দায়েই তারা ভিক্ষা করেন। ভিক্ষা করা বন্ধের জন্যে তাদেরকে একটি করে ছাগলের বাচ্চা দেয়া হয়েছে। এ ছাগলের বাচ্চা থেকে আয় হবে কমপক্ষে ১ বছর পর। তারা সাংবাদিকদের কাছে প্রশ্ন রাখেন- এ এক বছর আমাদের কিভাবে চলবে?

এ প্রসঙ্গে মাগুরা সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইয়ারুল ইসলাম জানান- সদর উপজেলার ১৩ ইউনিয়নের ৩০৭ জন ভিক্ষুককে এককালিন সুবিধাসহ বৃদ্ধ ভাতা, বিধবা ভাতা, ৪০ দিনের কর্মসূচীসহ সরকারের বিভিন্ন কর্মসূচীর আওতায় আনা হয়েছে। এর ফলে তাদের আর ভিক্ষা করতে হবে না বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

জেলা প্রশাসক মুহ. মাহবুবর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ গণ সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন  অতিরিক্ত সচিব আকরাম আল হোসেন, মাগুরার জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান পংকজ কুন্ডু, সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রুস্তম আলী, সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইয়ারুল ইসলাম সহ অন্যরা। সভা থেকে মাগুরা সদর উপজেলাকে বাল্য বিবাহ ও ভিক্ষুক মুক্ত ঘোষণা করা হয়।

রূপক আইচ/মাগুরা