শাহিনুর আহমেদ, মাগুরাবার্তাটোয়েন্টিফোর.কম
এ বয়সে পরিবারের ছায়ায় আদরে বেড়ে উঠার কথাওরা নাসিমা, ময়না, অনিক, সাগর ও শাকিলের। বয়স ৬ কি ৭। । স্কুলে পড়াশোনা করার কথা। বিকেল হলেই বন্ধুদের সঙ্গে খেলাধুলায় মেতে থাকার কথা। সুবিধাভোগী আর দশটা ছেলে-মেয়েদের চেয়ে একেবারেই আলাদা। সমাজের সকল সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত। হাট-বাজার, রাস্তা-ঘাটে ময়লা-নোংরা নালা ঘেঁটে চলে জীবন। পরিত্যক্ত পলিথিন, বোতল, কাগজ কুঁড়িয়ে নিজের পেট চালায়। কখনও আধ পেটা, কখনও না খেয়ে পথে-ঘাটে ঘুরে বেড়ায়, ফুটপাতে রাত কাটায়। সমাজের কাছে অচ্ছুত্য তারা, অবহেলিত। কিন্তু তারাও অজান্তেই পরিবেশ-পরিচ্ছন্ন রাখছে ময়লা-আবর্জনা ঘেঁটে নানা রকম বর্জ্য কুঁড়িয়ে। ঢাকা মহানগরীতে এ রকম শিশুর সংখ্যা অসংখ্য। তারপরেও কিছু শিশু ব্যতিক্রম, তেমনি পাঁচ পথ শিশুকে ‘প্রকৃতির বন্ধু পথশিশু’ সম্মাননায় দিলো প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশন। শনিবার ছিল তাদের সপ্তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। এই উপলক্ষে তেজগাঁওয়ের কার্যালয়ে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সেখানেই তাদের সম্মাননা দেওয়া হয়। তাদের নিয়ে কাটা হয় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কেক।
রাজধানীর তেজগাঁওয়ের চ্যানেল আইয়ের কার্যালয়ে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী অ্যাডভোকেট মোস্তাফিজুর রহমান। অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন চ্যানেল আইয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফরিদুর রেজা সাগর। স্বাগত বক্তব্য রাখেন প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মুকিত মজুমদার বাবু। অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ড. ইনাম আল হক, মঞ্জুরুল হান্নান খান, ড. মনোয়ার হোসেন, ড. নূরজাহান সরকার, আবদুল ওহাব, ড. ইশতিয়াক সোবহান, ড. জসিম উদ্দিন ও জুনায়েদ কবির।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী অ্যাডভোকেট মোস্তাফিজুর রহমান বলেন ‘সব শিশুর সব ধরনের অধিকার রয়েছে। পথ শিশুরাও তার বাইরে নয়। সরকার চেষ্টা করছে সুবিধা বঞ্চিতদের শিক্ষাসহ মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করতে। সরকারের পাশাপাশি বিত্তবানদের এগিয়ে আসতে হবে। যে যার অবস্থান থেকে সহানুভূতির হাত বাড়ালে একটি শিশুর তা অধিকার থেকে বঞ্চিত হবে না।’
জীবনে প্রথমবারের মতো এ ধরনের অনুষ্ঠানে এসে ওই পাঁচ শিশু জানিয়েছে, ‘ভবিষ্যতে লেখাপড়া চালিয়ে যাবে তারা।’ আর মন্ত্রণালয় প্রতিশ্র“তি দিয়েছে এই শিশুদের নিয়ে আরও বিনিয়োগ বাড়ানোর।
দেশে প্রাথমিক ও নিম্নমাধ্যমিক পর্যায়ে পড়াশোনার যোগ্য ৫৬ লাখ শিশু বিদ্যালয়ে যায় না। এদের একটি অংশ কখনোই বিদ্যালয় মুখী হয়নি, আবার অন্য অংশটি ঝরে পড়া। বিদ্যালয়ের বাইরে থাকা শিশুদের এই তথ্য জানিয়েছে ইউনিসেফ ও ইউনেসকো। আন্তর্জাতিক এই সংস্থা দু’টো বলছে, আর্থিক অভাবই এজন্য দায়ী। বিদ্যালয়ে না যাওয়া এমন শিশুদের একটি বড় অংশ ময়লা-আবর্জনা পরিস্কার করে তাদের জীবন নির্বাহ করে। এমন পাঁচ শিশুকে পরিবেশ বন্ধু সম্মানিত করায় প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে সাধুবাদ জানান অতিথিরা। আর এমন কার্যক্রম অনেকের কাছেই দৃষ্টান্ত হতে পারে এমন মন্তব্য করেছেন অনুষ্ঠানে অংশ নেয়া বিশিষ্ট অতিথিরা। একই সঙ্গে দেশের পরিবেশ ও প্রকৃতি রক্ষায় সবাইকে এক হয়ে কাজ করার আহবান জানিয়েছেন বিশিষ্ট পরিবেশবিদ ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা। অনুষ্ঠানে জানান হয় ‘দেশের প্রকৃতি ও পরিবেশকে সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে নীতি নির্ধারক মহলের সামনে তুলে ধরতে গত সাত বছরে দুর্গম পাহাড় থেকে গভীর অরণ্য আর সাগরতলে ছুটে গেছে প্রকৃতি ও জীবন দল। প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মুকিত মজুমদার বাবুর নেতৃত্বে চ্যানেল আইয়ে সাপ্তাহিক অনুষ্ঠানের পাশাপাশি প্রকৃতি ও পরিবেশ নিয়ে গবেষণা, প্রকাশনা এবং প্রান্তিক পর্যায় থেকে দেশ-বিদেশে সচেতনতার বার্তা ছড়িয়ে দিতে নানাভাবে কাজ চলছে।
মুকিত মজুমদার বাবু বলেন, ‘সবাই এগিয়ে আসলে পরিবেশ রক্ষায় আরো এগিয়ে যাবে দেশও।’ বর্ষপূর্তির অনুষ্ঠানে পাঁচ প্রকৃতি বন্ধু পথশিশুকে পুরস্কার প্রদানের পাশাপাশি প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশন-চ্যানেল আই পরিবেশ সংরক্ষণ পদক প্রদান করা হবে আগামী ১৭ ডিসেম্বর।
রূপক/মাগুরা/ ৪ডিসেম্বর১৬