অলোক বোস,মাগুরা
‘আব্বা আমাগেরতো কোন স্বপ্ন নেই। শুধু চিন্তা আছে। ভাতের চিন্তা। বউ, পুলাপান নিয়ে তিন বেলা প্যাট ভরে ভাত খাওয়ার চিন্তা। দিনভোর ভিক্ষে ওরি। যত সুমায় দেড় কেজি চালির দাম না হয় তত সুমায় মাথারতে চিন্তা যায়না। ৬০-৭০ টায়া আয় হলি হাফ ছাড়ে বাচি। তারপর যা হয় তা দিয়ে মরিচ, নুন, তেল কিনি। না হলি, না কিনি। একদিন বাড়িতে বার হতি না পারলি বউ কাজ কাম ওরে যা জুগাড় করে তাতে এক বেলা খাওয়াও জোটে না। খায়ে না খায়ে দিন যায়। কিন্তু আজকে মনে কয় ভাতের চিন্তা গেল। মেম্বর কার্ড দেছে। সরকার ১০ টাকা কেজিতি চাল দেচ্ছে। আজ সেই চাল তুল্লাম। এহন চায়ে-চিন্তে যা আয় হবেনে তা দিয়ে হাট-বাজার করবানে। না হলি না করবানে। ভাতের চিন্তাতো দুর হয়ছে। ’
মাগুরার জেলা প্রশাসক মুহ. মাহবুবর রহমান ও জেলা অওয়ামীলীগের সেক্রেটারী পঙ্কজ কুন্ডুর হাত থেকে সরকারের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির মাধ্যমে সদর উপজেলার আঠারখাদা ইউনিয়নের গাঙ্গনালিয়া বাজার থেকে ১০ টাকা কেজি দরের ৩০ কেজি চাল পেয়ে হাসি মুখে কথাগুলো বলছিলেন, গাঙ্গনালিয়া গ্রামের শারীরিক প্রতিবন্ধী ভিক্ষুক আবুল কালাম (৫০)।
কালাম জানান- তিন ছেলে-মেয়ে ও বউ নিয়ে সুখের সংসার ছিল আবুল কালামের। ট্রাকের হেলপারি করে ভালই চলছিল সংসার। সেই সুখের সংসারের বজ্রাঘাতের মত দূর্ঘটনা হানা দিল। ২০ বছর আগে রাজবাড়ি জেলায় এক ট্রাক দূর্ঘটনায় একটি পা পঙ্গু হয়ে যায়। সেই থেকে ভিক্ষাবৃত্তি করে খেয়ে না খেয়ে চালাতে হচ্ছে সংসার।
আবুল কালাম বলেন- বাজারে চালের যা দাম। সারাদিন ভিক্ষা করেও দুকেজি চালের টাকাই অনেক সময় আয় হয় না। ১০ টাকা কেজির চাল পেয়ে বেশ স্বস্তি পেয়েছেন। তিনি গরীব মানুষের জন্য এ কর্মসূচী সারা বছর চালু রাখার দাবী জানান।
একই কথা বলেন- সত্তোরোর্ধ দৃষ্টি প্রতিবন্ধী তোয়াজ উদ্দিন, শারীরিক প্রতিবন্ধী আব্দুর রব, সারদা বালাসহ একাধিক ভিক্ষুক। তারামাগুরাবার্তাকে জানান- ইলেকশনের সময় শেখের বেটি বলেছিলেন ১০টাকা কেজি চাল খাওয়াবেন। কেউ কেউ সেকথা নিয়ে হাসি ঠাট্টা করেছেন। কিন্তু শেখ হাসিনা সে কথা রেখেছেন। সত্যি সত্যি ১০টাকা কেজিতে চাল পেয়ে আমরা খুশি। তবে সারা বছর দরিদ্রদের জন্য এ কর্মসূচী চালু রাখার দাবী জানান তারাসহ সুবিধাভোগীরা।
মাগুরার জেলা প্রশাসক মুহ. মাহবুবর রহমান মাগুরাবার্তাকে বলেন- সরকার মাগুরা জেলার ২৪ হাজার ৭৮১ টি হত দরিদ্র পরিবারকে ১০টাকা কেজি দরে মাসে ৩০ কেজি করে এ চাল দিচ্ছে। ২০ সেপ্টম্বর সোমবার থেকে এ কর্মসূচী শুরু হয়েছে। মাগুরা জেলার ১৩শ’ ২৬ জন ভিক্ষুককে এ কর্মসূচির আওতায় আনা হয়েছে। খুলনা বিভাগকে ভিক্ষুক মুক্ত করার যে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে এ কর্মসূচির মধ্যে দিয়ে তা বাস্তবায়ন শুরু হলো। পরবর্তীতে তাদের জন্য আরো প্রয়োজনীয় সহায়তা গ্রহন করা হবে।
সম্পাদনা: রূপক আইচ, ২০ সেপ্টেম্বর ১৬