বিশেষ প্রতিনিধি
মাগুরার শ্রীপুর উপজেলার সব্দালপুর ইউনিয়নের বাখেরা-মকরদ্দমখোলা গ্রামে মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের উপর নানাবিধ নির্যাতন ও হামলার প্রতিবাদে মঙ্গলবার দুপুরে সাংবাদিক সম্মেলন ও মানববন্ধন করেছে এলাকাবাসি। সব্দালপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুসফিকুর রহমান মিল্টনের নেতৃত্বে এলাকাবাসী এ সংবাদিক সম্মেলনের আয়োজন করে। এ সময় মকরদ্দোমখোলা গোরস্থান সংলগ্ন স্থানে এলাকাবাসী ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি নাজমুল ইসলাম ও তার পৃষ্ঠপোষক আবদুর রশিদসহ তার সহযোগিদের যুদ্ধাপরাধী ও তাদের পরিবারের সদস্য দাবি করে মানববন্ধনের মাধ্যমে এ ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক বিচার দাবি করেন। সাংবাদিক সম্মেলনে স্থানীয় ইউপি সদস্য, এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তি, নারীসহ বিভিন্ন স্তরের অধিবাসী উপস্থিত ছিলেন। এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ মুক্তিযুদ্ধকালীন ২৭শহীদ ট্রাজেটির ‘কামান্না যুদ্ধে’ আহত ও সব্দালপুর ইউনিয়ন মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের সাবেক কমান্ডার মুক্তিযোদ্ধা লিয়াকত আলী বলেন, আমি একজন যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হলেও আমরা এখনও স্বাধীনতা লাভ করতে পারিনি। আমরা বিভিন্ন সময়ে স্বাধীনতা বিরোধীদের হাতে নির্যাতনের শিকার। গত ১২ ফেব্রæয়ারী আমার বাড়ির সামনে আমার ছোট ভাই যুবলীগ নেতা ডলারের উপর হামলা করে তার ডান হাত ভেঙ্গে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। আমি এ ঘটনার বিচার চাই। ইউনিয়ন আওয়ামীলীদের সাধারণ সম্পাদক মুশফিকুর রহমান মিল্টন তার লিখিত বক্তব্যে অভিযোগ করে বলেন, আমরা মুক্তিযোদ্ধা পরিবার ও মুক্তিযোদ্ধা স্বপক্ষের আওয়ামী পরিবার। আমরা এই গ্রামে স্বাধীনতা বিরোধীদের হাতে বিভিন্নভাবে নির্যাতিত হচ্ছি। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হলেও মনে হয় আজও আমরা স্বাধীনতা অর্জন করিনি। আমাদের উপজেলার ২১ জন তালিকাভ‚ক্ত রাজাকারের মধ্যে ১৩ জনই আমাদের গ্রামের। আমরা বিভিন্ন সময়ে তাদের প্রজন্ম দ্বারা লাঞ্চিত হচ্ছি। আর এদের নেতৃত্ব দিচ্ছে সেই স্বাধীনতা বিরোধীর একনিষ্ঠ সহচর ও ছাত্রলীগে অনুপ্রবেশকারী সব্দালপুর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি নাজমুল ইসলাম। সর্বশেষ গত ১২ ফেব্রæয়ারি শনিবার বিকেলে এই পেটোয়া বাহিনী দ্বারা হামলার শিকার হয়ে যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা লিয়াকত আলীর পরিবারটি। এ সময় হামলার শিকার হয় আমার ছোটভাই মাগুরা আদর্শ ডিগ্রী কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান মাগুরা জেলা যুবলীগের সদস্য মো. ডলার মোল্লা। আমরা এ ঘটনার সাথে জড়িত সব্দালপুর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি নাজমুল ইসলামকে বহিষ্কার ও শাস্তির দাবি জানাচ্ছি। হামলায় আহত মাগুরা আদর্র্র্শ কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান যুবলীগ নেতা ডলার মোল্লা বলেন, আমি দলের দুঃসময়ে ছাত্রলীগ করেছি। ২০০২ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত বিএনপির রক্ত চক্ষু উপেক্ষা করে মাগুরায় ছাত্রলীগ করেছি। আর এখন যদি এই ছাত্রলীগ দ্বারা আমার নির্যাতন হতে হয় এর থেকে কষ্টের কি আছে? নাজমুল ও বিএনপি নেতা আবদুর রশিদের পেটুয়া বাহিনীর হাতে আমরা মুক্তিযোদ্ধা পরিবার নির্যাতনের শিকার হচ্ছি। আমরা জননেত্রী শেখ হাসিনার কাছে এ ঘটনার বিচার চাই।20220215_124010এ বিষয়ে অভিযুক্ত আবদুর রশিদের সঙ্গে মোবাইলে কথা হলে এলাকার গ্রাম্য রাজনীতির সম্পৃক্ততার কথা অস্বীকার করে তিনি জানান, প্রথমত আমি গ্রামেই থাকি না। আর নাজমুল ছাত্রলীগের ইউনিয়ন সভাপতি। সে আমার কথামত কেন চলবে। তার আর আমার রাজনৈতিক মত আলাদা। আমি আজ সকালেও বীর মুক্তিযোদ্ধা লিয়াকত সাহেবের সঙ্গে গ্রামের অশান্তি মিটমাট করে শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করার কথা বলেছি। আর নাজমুলকে একজন পুলশ অফিসারের সামনেই মিলটন ও তার দলের লোক মারপিট করেছে বলে আমি শুনেছি।
উল্লেখ্য, বাখেরা ও মদরদ্দমখোলা গ্রামের আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সব্দালপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুশফিকুর রহমান মিল্টন ও সব্দালপুর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি নাজমুল ইসলামের মধ্যে বিরোধ চলে আসছে। এরই জেরে গত ১২ ফেব্রæয়ারী শনিবার বিকেলে মারামারির ঘটনা ঘটে। এ সময় আহত হয় সব্দালপুর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি নাজমুল ইসলাম ও সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ও বর্তমান মাগুরা জেলা যুবলীগের সদস্য মো. ডলার মোল্লা।

মাগুরা / ১৬ জানুয়ারী ২২