বিশেষ প্রতিনিধি, মাগুরাবার্তা
লকডাউন কার্যকর করতে সুষ্ঠু তালিকা প্রণয়ন করে করোনায় কর্মহীন ও দরিদ্র মানুষকে খাদ্য ও নগদ অর্থ প্রদান, মাগুরা সদর হাসপাতালে আইসিইউ নির্মাণ ও উপজেলা পর্যায়ে করোনা চিকিৎসা নিশ্চিত করার দাবিতে বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ মাগুরা জেলা শাখার উদ্যোগে আজ রবিবার সকালে মাগুরার চৌরঙ্গী মোড়ে প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন ও সমাবেশ করেছে বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ)। বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ কেন্দ্রীয় পাঠচক্র ফোরামের সদস্য প্রকৌশলী শম্পা বসুর সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বাসদ মাগুরা জেলা সংগঠক ভবতোষ বিশ্বাস জয়, মোঃ সোহেল মুন্সীসহ অন্যরা।
বক্তারা বলেন, করোনা দুর্যোগের দ্বিতীয় ঢেউ চলছে বাংলাদেশে। করোনায় গরিব মানুষের পাশাপাশি মধ্যবিত্তের জীবন ও জীবিকা হুমকিতে পড়েছে। লাখ লাখ মানুষ বেকার হয়েছেন, অনেকের আয় কমেছে। গবেষণার তথ্য অনুযায়ী, করোনার কারণে নতুন করে গরিব হয়ে গেছেন কমবেশি প্রায় আড়াই কোটি মানুষ। নতুন ও পুরাতন মিলে দেশের প্রায় ৪২ শতাংশ (৭ কোটির বেশি) মানুষ এখন গরীব। গত এপ্রিল মাস থেকে কখনো স্থানীয় ভাবে কখনো কেন্দ্রীয়য় ভাবে সীমিত, কঠোর, অতিকঠোর লকডাউন, শাটডাউন চলছে । এরমধ্যে গত ১ জুলাই থেকে ১৪ জুলাই পর্যন্ত কঠোর লকডাউন ছিল । ৮ দিনের বিরতি দিয়ে আবার ২৩ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত কঠোর লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে । লকডাউনে ক্ষতিগ্রস্থ নিম্ন আয়ের মানুষের সহায়তায় ৩ হাজার ২০০ কোটি টাকার পাঁচটি নতুন প্রণোদনা প্যাকেজের ঘোষণা দিয়েছে সরকার প্রধান। প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় মোট ১৭ লাখ ২৪ হাজার ৪৭০ জন উপকারভোগীর (আড়াই হাজার টাকা করে দেওয়া হবে) জন্য বরাদ্দ ৪৫৯ কোটি টাকা। শহর এলাকায় নিম্ন আয়ের জনসাধারণের সহায়তার লক্ষ্যে আগামী ২৫ জুলাই থেকে ৭ আগস্ট পর্যন্ত ১৪ দিন সারাদেশে ৮১৩টি কেন্দ্রে বিশেষ ওএমএস কার্যক্রম পরিচালনা করার জন্য ১৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। এই বরাদ্দের আওতায় রয়েছে ২০ হাজার মেট্রিক টন চাল ও ১৪ হাজার মেট্রিক টন আটা। ৩৩৩ ফোন নম্বরে জনসাধারণের অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে খাদ্য সহায়তা প্রদানের জন্য জেলা প্রশাসকদের অনুকূলে বিশেষ বরাদ্দ প্রদান করা হয়েছে ১০০ কোটি টাকা। অর্থাৎ মোট ৭০৯ কোটি টাকা এসব কাজে বরাদ্দ করা হয়েছে । বাদবাকি টাকাটা বিভিন্ন ধরনের ঋণ প্রদানের জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে । যা চাহিদার তুলনায় খুবই অপ্রতুল । দরিদ্র মানুষের ঘরে খাবার না দিয়ে লকডাউন মানতে বলাটা অমানবিক । বক্তারা আরও বলেন, করোনা দুর্যোগের শুরু থেকে গণকমিটি মাগুরা জেলার পক্ষ থেকে মাগুরা জেলা সদর হাসপাতালে পিসিআর ল্যাব (করোনা টেস্ট ল্যাব), আইসিইউ ও হাই ফ্লো অক্সিজেন সাপ্লাই সিস্টেম স্থাপন করার দাবি জানান হয়েছে । করোনা দুর্যোগের প্রায় দেড় বছরে হাই ফ্লো অক্সিজেন সাপ্লাই সিস্টেম ছাড়া আর কিছু হয়নি। ফলে এখনও টেস্ট রিপোর্ট আসতে অনেক সময় লাগছে। অনেক সময় রিপোর্ট আসার আগেই রোগীর অবস্থা খারাপ হয়ে যাচ্ছে; কোন কোন ক্ষেত্রে রোগী মারা যাচ্ছেন। আইসিইউ না থাকায় আইসিইউ সাপোর্টের জন্য ঢাকায় নিয়ে যেতে হচ্ছে । উপজেলা পর্যায়ে করোনা চিকিৎসার অবস্থা আরও করুণ । এখন উপজেলা পর্যায়ের রোগীর ক্ষেত্রে মৃত্যু সংখ্যা বেশি । সমাবেশ থেকে লকডাউন কার্যকর করতে সুষ্ঠু তালিকা প্রণয়ন করে করোনায় কর্মহীন ও দরিদ্র মানুষকে খাদ্য ও নগদ অর্থ দাওয়া এবং মাগুরা সদর হাসপাতালে আইসিইউ নির্মাণ ও উপজেলা পর্যায়ে করোনা চিকিৎসা নিশ্চিত করার দাবি জানান হয় ।

রূপক / মাগুরা /১৮ জুলাই ২০২১