প্রতিনিধি, মাগুরা
মাগুরায় করোনায় কর্মহীন ৪৩৮জন শিল্পী কলা কুশলীর জন্য প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে দেয়া ৪৩ লাখ ৮০ হাজার টাকা বিতরণে অনিয়ম দূর্ণীতির বিচারের দাবীতেেআজ মঙ্গলবার (২৭ এপ্রিল) দুপুরে জেলা প্রশাসকের কাছে অভিযোগ দিয়েছেন জেলার বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনের প্রতিনিধি ও শিল্পীবৃন্দ। ওই তালিকায় ব্যাপক দূর্ণীতি, অনিয়ম ও স্বজনপ্রীতি করা হয়েছে বলে উল্লেখ করে তারা মাগুরা জেলা শিল্পকলা একাডেমীর কালচারাল অফিসার মোঃ জসিম উদ্দিন ও সহ-সাধারণ সম্পাদক বিশ্বজিৎ চক্রবর্তীসহ কতিপয় কর্মকর্তার যোগসাযোশে গোপনে তালিকা তৈরীর বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আবেদন জানান। জেলার ২৬ জন সাংস্কৃতিক কর্মী স্বাক্ষরিত এক পত্রে শিল্পীরা অভিযোগ করেন- জেলা শিল্পকলা একাডেমীর আবেদন যাচাই বাছাইয়ে জেলার সক্রিয় কোন সাংস্কৃতিক ও সাহিত্য সংগঠনের কোন প্রতিনিধিই উপস্থিতি ছিলেন না। তারা অভিযোগে জানান তালিকায় বিশ্বজিৎ চক্রবর্তী শুধু তার নিজ পরিবারেরই ১৫ জন সদস্যের নাম শিল্পী হিসেবে অন্তর্ভূক্ত করেছেন। যারা কেউই শিল্পী নন। শুধুমাত্র ব্যক্তিগত পরিচয় থাকায় বিশ্বজিৎ চক্রবর্তীর সহযোগিতায় জেলা শহরে ২টি ফ্লাট ও একাধিক বাড়িসহ কোটি কোটি টাকার সম্পত্তির মালিকের স্ত্রীকেও দেয়া হয়েছে করোনায় ক্ষতিগ্রস্থ শিল্পীর প্রনোদনা। বিশ্বজিতের সহায়তায় শিল্পকলার সংগীত শিক্ষক অজিত রায় ও অপর একটি সংগীত বিদ্যালয়ের শিক্ষক সুকুমার পাল বিভিন্ন এলাকা থেকে অশিল্পীদের নামের তালিকা সংগ্রহ করে তাদের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকার কমিশন বাণিজ্য করেছে। (যার একটি অডিও ইতিমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে ) এভাবে ওই চক্রটি একদিকে যেমন প্রকৃত শিল্পীদের বঞ্চিত করেছেন অপর দিকে গ্রামের সহজ সরল সাধারণ মানুষের সরলতার সুযোগ নিয়ে তাদের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। অথচ মাগুরার বহু সাংস্কৃতিক সংগঠন ও সংগঠনের বাইরে থাকা অনেক গরীব শিল্পীরা কোন প্রনোদনাই পাননি। এমনকি ওই প্রনোদনা দেয়ার তথ্যও তাদেরকে জানানোই হয়নি। এমনকি জামাত বিএনপির সাথে সরাসরি জড়িত ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিরোধী অশিল্পী ব্যক্তিকে শিল্পী হিসেবে প্রনোদনা দেয়া হয়েছে বলেও তারা অভিযোগ করেন। তালিকায় দেখা যায়, ব্যক্তিগত পরিচয় থাকায় অন্য জেলার বাসিন্দা অনেকেই তালিকায় স্থান পেয়েছেন। শিল্পকলার সরকারি কর্মচারির পরিবারের সদস্যের নামেও নেয়া হয়েছে এ সহায়তা। এতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর একটি মহতি উদ্যোগকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হয়েছে। যা নিয়ে ভেতরে ভেতরে বিক্ষুব্ধ জেলার সাধারণ শিল্পী সমাজ। CamScanner 04-27-2021 14.35_1
শিল্পীরা অভিযোগে জানান- সরকারিভাবে যখন করোনায় ক্ষতিগ্রস্থ শিল্পীদের সহায়তা দেয়ার জন্য নামের তালিকা আহবান করা হয় তখন জেলা কালচারাল অফিসার, শিল্পকলার সাউন্ড অপারেটর কামরুজ্জামান, সহ সাধারণ সম্পাদক বিশ্বজিৎ চক্রবর্তী, অজিত রায়সহ একটি অসাধুচক্র একত্রে বিভিন্ন পরিচিত ব্যক্তির নাম ও আইডি নম্বর সংগ্রহ করে নিজ মনগড়া একটি তালিকা প্রেরণ করে। কিন্তু সেক্ষেত্রে প্রকৃত শিল্পীদের বিষয়টি জানতেই দেয়া হয়নি। অথবা তাদের আবেদন গ্রাহ্যই করা হয়নি। যার ফলে প্রকৃত শিল্পীরা অনেকেই বঞ্চিত হলেও দূর্ণীতির মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যক্তির নাম দিয়ে তালিকা প্রেরণ করা হয়। ফলে সরকারের এত বড় একটি মহতি উদ্যোগ ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছে। শিল্পী সংস্কৃতির বিকাশে বিশ্বজিৎ চক্রবর্তীর মত মানুষ মুখে প্রগতিশীলতার কথা বললেও স্বজনপ্রীতি ও দূর্ণীতির মাধ্যমে জেলার শিল্প সংস্কৃতির ব্যাপক ক্ষতি করছেন। শিল্পকলা একাডেমীকে নিজের পরিবারিক সম্পত্তির মত ব্যবহারের ফলে শিল্প সংস্কৃতিতে ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। এ অবস্থায় জেলার শিল্প সংস্কৃতির বিকাশে বিশ্বজিৎ গংদের হাত থেকে সংস্কৃতিকে রক্ষার আহবান জানান তারা। CamScanner 04-27-2021 14.35_2
এ সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সার্বিক জুলিয়া সুকায়না, বিশিষ্ট কবি ও সাংবাদিক আব্দুল হাকিম, চিত্রশিল্পী শামসুজ্জামান পান্না, সাংবাদিক লিটন ঘোষ, সংগীত শিল্পী হাসিয়ারা খাতুন হাসি, শিপ্রা দাস, হুমায়ুন কবির, চিত্রশিল্পী আশিষ রায়, নাট্য শিল্পী শামীম শরীফ, কবি ও সাংবাদিক লিটন ঘোষ জয়, সাংস্কৃতিক সংগঠক কামরুজ্জামান বিপ্লব, শরীফ স্বাধীনসহ অন্যরা। শিল্পীরা জেলার দুটি আসনের সংসদ সদস্যসহ, সংস্কৃতি সচিব ও শিল্পকলা একাডেমীর মহাপরিচালক বরাবরে আবেদনের কপি প্রদান করেন।
জেলা প্রশাসক শিল্পীদের অভিযোগ গ্রহণ করে প্রধানমন্ত্রীর অনুদান বিতরণে কোনপ্রকার দূর্ণীতি হলে তার বিচারের আশ্বাস দেন। একই সঙ্গে করোনা পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবকি হলেই একটি সাধারণ সভা করে সকল শিল্পীদের নিয়ে শিল্পকলাকে আরও গতিশীল করার আশ্বাস দেন।

রূপক /মাগুরা / ২৭ এপ্রিল ২০২১