বিশেষ প্রতিনিধি, মাগুরার্তা
মাগুরা জেলার চারটি উপজেলার ৩৬টি ইউনিয়ন পরিষদের জন্ম নিবন্ধন তৈরির অনলাইন সার্ভার কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। এতে জন্ম নিবন্ধন তুলতে না পেরে ভোগান্তিতে পড়েছেন শত শত মানুষ। ইউনিয়ন পরিষদে জন্ম নিবন্ধন দেওয়ার কাজে নিয়োজিত একাধিক উদ্যক্তা জানিয়েছেন প্রায় বিশ দিনেরও বেশি সময় সার্ভার ডাউন থাকায় তাঁরা অলাইনে জন্ম নিবন্ধন তুলতে পারছেন না। এতে একদিকে মানুষ সেবা পাচ্ছেন না অন্যদিকে, আয় হারিয়ে বেকায়দায় পড়েছেন তাঁরা।
সার্ভার নিয়ন্ত্রণ করেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় শাখার আইসটি বিভাগ। সংশ্লিষ্ট সবার সাথে কথা বলে জানা গেছে, বর্তমানে স্কুলে শিশুদের ভর্তি, পাসপোর্ট, নতুন ভোটার ও জমির নাম খারিজসহ নানা কাজে জন্ম নিবন্ধন অপরিহার্য । জন্ম নিবন্ধন প্রদান করেন ইউনিয়ন পরিষদ ও পৌরসভা। ইউনিয়ন পরিষে ও পৌরসভায় একজন করে উদ্যক্তা আছেন। অস্থায়ী ভিত্তিতে নিয়োগ পাওয়া এসব উদ্যক্তারা জন্ম নিবন্ধনের সরকারি ফিস থেকে বেতন পান। একটি জন্ম নিবন্ধন তুলতে মোট ১০০ টাকা ফিস প্রদান করতে হয়। ৫০ টাকা সরকারি বাকি ৫০ টাকা ইউনিয়ন পরিষদের ফিস।
মাগুরা জেলার সদর উপজেলা, শ্রীপুর, মহম্মদপুর ও শালিখা উপজেলায় মোট ৩৬টি ইউনিয়ন পরিষদ ও একটি পৌরসভা রয়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে পাঁচটি ইউনিয়ন পরিষদ ঘুরে দেখা গেছে, শত শত জন্ম নিবন্ধনের আবেদন জমা পড়ে আছে। পাঁচদিন থেকে সাতদিন পর্যন্ত ঘুরছেন কাজ হচ্ছে  না। জন্ম নিবন্ধন না পাওয়ায় শিশুদের সঠিক সময়ে স্কুলে ভর্তি করাতে পারছেন না বাবা-মায়েরা।

শ্রীপুর উপজেলা সদর ইউনিয়ন পরিষদের উদ্যক্তা রমজান আলী জানান, তাঁর পরিষদে কয়েকশ’ জন্ম নিবন্ধনের আবেদন জমা পড়েছে। পাঁচদিন থেকে সাত দিন পর্যন্ত  ঘুরেও জন্ম নিবন্ধন পাচ্ছেন না। প্রায় বিশ দিনের বেশি সময় অনলাইন সার্ভার কার্যত বন্ধ (ডাউন) থাকায় এ সমস্যা তৈরি হয়েছে।

মহম্মদপুর সদর ইউনিয়ন পরিষদের উদ্যক্তা কৃষ্ণ চক্রবর্তী জানান, আমরা গভীর রাতে ও ভোরে সার্ভার খুলে বসে থকি। দুই একদিন পর একটি বা দুই টা জন্ম নিবন্ধন করতে পারি। মানুষের চাপ বাড়ছে । কাজ করতে পারায় চরম ভোগান্তিতে পড়েছি।

শালিখা উপজেলার বুনাগাতি ইউনিয়নের উদ্যক্তা মুক্তি মাহামুদ বলেন, আমরা কোন সরকারি বেতন পাই না। জন্ম নিবন্ধনের আয়ের কমিশন থেকে বেতন পান। কাজ না হওয়ায় আয় নেই বললে চলে। উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের শরনাপন্ন হলে গতানুগতিক উত্তর সার্ভারের কাজ চলছে। কোন সমাধান নাই।

মহম্মদপুর উপজেলার ধোয়াইল এলাকার  ব্যবসায়ি আলা উদ্দিন মিয়া বলেন, ছেলের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তিও জন্য এক সপ্তাহের বেশি সময় আবেদন করেও জন্ম নিবন্ধন পাননি। প্রতিদিন একবার ইউনিয়ন পরিষদে যান। কোন কাজ হচ্ছে না। জন্ম নিবন্ধন না পেলে ভর্তি নিচ্ছে না প্রাথমিক বিদ্যালয় ।
মহম্মদপুর উপজেলা সদর মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়য়ের প্রধান শিক্ষক আলীমুজ্জামান বলেন, শিশু শ্রেণিতে ভর্তি হতে জন্ম নিবন্ধন বাধ্যতামূলক। এখানে বয়স প্রমাণের বিধি নিষেধ আছে। অনেকেই বাচ্চাকে ভর্তি করতে এনে জন্ম নিবন্ধন না থাকায় ফিরে যাচ্ছেন।
মাগুরা সদরের ইছাখাদার যুবক ইমরোজ হোসেন, তিনি নতুন ভোটার হবেন। জন্ম নিবন্ধন না থাকায় আবেদন করতে পারছেন না। তিনি এনআইডি কার্ড তুলে পাসপোর্ট করবেন বিদেশ যাওয়ার জন্য। ইউনিয়ন পরিষদে  ঘুরেও কোন লাভ হচ্ছে না।
শালিখার আড়পাড়ার আব্দুস সালাম মোল্যা (৬৫) জানান, জমির নামজারি করতে জন্ম নিবন্ধন কার্ড দরকার কিন্তু আবেদন করেও পাচ্ছেন না।
মহম্মদপুর সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রাবেয়া বেগম বলেন, বিশ দিনের বেশি সময় সার্ভার ডাউন থাকায় তারাঁ জন্ম নিবন্ধনের সেবা দিতে পারছেন না। লোকজন চরম হয়রানি হচ্ছেন। উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানালেও শুধুই আশ্বাস মিলছে, সমাধান মিলছে না-জানান তিনি।

মাগুরার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ও স্থানীয় সরকারের উপপরিচালক  (ভারপ্রাপ্ত) মো. কামরুজ্জামান জানান, সার্ভার ডাউন থাকায় জন্ম নিবন্ধন পেতে সমস্যা হচ্ছে। সার্ভার আপডেটের কাজ শেষ হলে বিষয়টির সমাধান  হবে বলে আশা করছি।

মাগুরা/ ১২ জানুয়ারী ২০২১