বিশেষ  প্রতিনিধি, মাগুরাবার্তা
মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলার পলাশবাড়িয়া ইউনিয়নের চর দেউলি এলকায়  পদ্মার শাখা মধুমতি নদীতে প্রায় দেড় কিলোমিটার  বাঁশের বেড়ার অবৈধ আড়বাধ দিয়ে মাছ শিকার  করছেন স্থানীয় প্রভাবশালী।  নদীর এই এলাকায় একটি চক্র কয়েক বছর ধরেই এভাবে বাঁধ দিয়ে অবৈধভাবে মাছ শিকার করে আসছে। বাঁধ দেওয়ার সঙ্গে নদীর দুই পারের ফরিদপুরের বোয়ারমারি ও মাগুরা উভয় জেলার লোকজন জড়িত। খবর পেয়ে মহম্মদপুর উপজেলার সহকারি কমিশনার (ভূমি) আজ মঙ্গলবার (৫ জানুয়ারি) সকালে বাঁধ অপসারণ করেন। সহকারী কমিশনার (ভূমি) হরেকৃষ্ণ অধিকারী জানান, মৎস্য সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী, নদী বা জলাধারের স্বাভাবিক প্রবাহ ব্যাহত করে এমন কোনো বাঁধ বা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা যাবে না, যাতে করে মাছের স্বাভাবিক চলাচল ব্যাহত হয়। মাছের চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে মাছ শিকার করা দণ্ডনীয় অপরাধ।

MAGURA BADH OPOSHARON PIC (2)

তিনি আরও  জানান, প্রশাসন, পুলিশ ও মৎস্য বিভাগের সহযোগিতায় মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে বিশাল এই বাঁধ অপসারণ করা হয়েছে। বাঁধের প্রায় দুইহাজারের বেশি বাঁশ ও দুই হাজার মিটার বিভিন্ন প্রকৃতির জাল জব্দ করা হয়েছে। অভিযান পরিচালনা কালে কেউ না থাকায় কাউকে আটক বা জেল জরিমানা করা সম্ভব হয়নি।

সরেজমিনে দেখা যায়, চর দেওলি গ্রামের পাশে পূর্ব থেকে পশ্চিম দিকে বাঁধ দেওয়া হয়েছে। বড় বড় বাঁশ লম্বা ও আড়াআড়ি করে নদীতে পুঁতে রাখা হয়েছে। নদীর এপার থেকে প্রায় দেড় কিলোমিটার লম্বা এই বাঁশের বেড়া। বাঁশের সঙ্গে ছোট ও বড় বিভিন্ন ফাঁসের জাল পেতে রাখা হয়েছে।

মঙ্গলবার  সরেজমিনে ওই বাঁধের পাশে মাঝ নদীতে একটি নৌকা বাঁধা ছিল। কিন্তু নৌকায় কোনো মানুষ ছিল না। ফলে এর সঙ্গে জড়িত কারা, তা জানতে স্থানীয় সাত-আটজনের সঙ্গে কথা বলেন এই প্রতিবেদক। তবে তাঁদের কেউই এ বিষয়ে তথ্য দিতে চাননি। কেউ বলেন, বাঁধ দেওয়ার সঙ্গে জড়িত লোকজনকে তাঁরা চেনেন না। অন্যরা বলেন, নদীর ওপারে অবস্থিত ফরিদপুরের লোকজন এই বাঁধ দিয়েছেন।

তবে স্থানীয় একটি সূত্রে জানা যায়,  ইউনিয়নের কালিশংকরপুর এলাকার তিনজন ব্যক্তি এই বাঁশের বেড়া দেওয়ার নেতৃত্বে আছেন। তাঁর সঙ্গে রয়েছেন আশপাশের আরও কয়েকজন। এর সঙ্গে জড়িত লোকজন সন্ত্রাসী-প্রকৃতির। ফলে এলাকার লোকজন তাঁদের বিষয়ে কথা বলতে ভয় পান।

পলাশ বাড়িয়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও শিক্ষক এম রেজাউল করিম চুন্নু বলেন, নদী দিয়ে প্রতিদিন কয়েকশ’ নৌযান চলাচল করে। বাঁধের কারণে নৌযান চলাচল মারাত্মক ব্যহত হয়। বাঁধে মাছ ধরতে কারেন্ট জালের সাথে ঘন নেটের জাল ব্যবহার করা হয়। এতে মাছের উৎপাদন ও বংশবৃদ্ধি ক্ষতিগ্রস্থ হয়। এছাড়া নদীতে স্বাভাবিক পানি প্রবাহ ব্যহত হওয়ায় চর পড়ে ও পাড় ভাঙন কবলিত হয়।

মহম্মদপুর  উপজেলার  মৎস্য কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্বে) ফেরদৌসি আক্তার  বলেন, নদী ও মৎস্য আইনে বাঁধ দেওয়া দণ্ডনীয় অপরাধ। মৎস্য পরিবেশ ও জীব বৈচিত্রের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। এজন্য মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে  অভিযান চালিয়ে বাঁশের বেড়া  উচ্ছেদ করা হচ্ছে।

 

 

মাগুরা / ৫ জানুয়ারী ২০২১