পংকজ রায়, মহম্মদপুর, মাগুরাবার্তা
প্রতিযোগিতা শুরুর আগেই মহম্মদপুরের মধুমতি নদীর দুই পাড়ে নামে কয়েক লক্ষ মানুষের ঢল। সংগীতের তাল-লয়ে বাইচালদের ছন্দময় বৈঠার তালে নদীর জল ময়ূরপঙ্খির মতোই ঝিলমিল করে উঠে। উল্লাসে মেতে উঠে নদী পাড়ের আমুদে লাখো দর্শক। এ বাইচে অংশ নেয় বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা ১৬ টি নৌকার বাইচ দেখে মুগ্ধ হন দুই তীরের লাখ মানুষ। এমনি ব্যাপক উৎসাহ উদ্দিপনা আর লক্ষ লক্ষ দর্শকের উপস্থিতিতে সোমবার ( ৪ নভেম্বর) বিকালে মহম্মদপুর উপজেলা সদরের পূর্বপাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া মধুমতি নদীতে অনুষ্ঠিত হলো আবহমান গ্রাম-বাংলার লোক ঐতিহ্যবাহী নৌকাবাইচ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়েছে। স্থানীয় সংসদ সদস্য ও সাবেক যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী ড. শ্রী বীরেন শিকদার এমপির পিতার নামে এ প্রতিযোগিতার নামকরণ করা হয়েছে বিহারী লাল শিকদার নৌকা বাইচ। বাইচে স্পন্সর হিসেবে রয়েছে প্রাণ গ্রুপ। এ বছর ৭ম বারের মত অনুষ্ঠিত হচ্ছে এ মেলা।
মহম্মদপুর উপজেলা ক্রীড়া সংস্থার আয়োজনে এ মেলাকে ঘিরে মধুমতি নদীর এলাংখালি ঘাট এলাকা ও নদীর দুই ধারের প্রায় ৫ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে দোকান-পাট ও বাহারি পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসে স্টল। মেলা প্রাঙ্গণে তৈরি করা হয়েছে বিশাল আকৃতির মঞ্চ। পথে পথে শোভা পেয়েছে বাহারি তোরণ।
বাৎসরিক এ নৌকাবাইচ উপভোগ করতে সকাল থেকেই শেখ হাসিনা সেতু সংলগ্ন মধুমতি নদীতে পার্শবর্তী যশোর, ঝিনাইদাহ, নড়াইল, ফরিদপুরসহ কয়েকটি জেলার বিভিন্ন শ্রেনির মানুষ ও এলাকার শিশু-কিশোর-কিশোরিসহ সকল বয়সী নারী-পুরুষ জমায়েত হতে থাকেন। তাদের উপস্থিতিতে এলাকায় সৃষ্টি হয় আনন্দঘণ ও উৎসব মূখর পরিবেশ।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আসিফুর রহমানের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে দুপুর ২ টার সময় বেলুন ও শান্তির প্রতীক কবুতর উড়িয়ে প্রতিযোগিতার উদ্বোধন করেন ড. শ্রী বীরেন শিকদার এমপি।
উদ্বোধন শেষে অতিথিরা নৌকা বাইচ পরিদর্শণ করেন। এ সময় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মাগুরার নবাগত জেলা প্রশাসক ড. আশরাফুল আলম, পুলিশ সুপার খান মুহাম্মদ রেজোয়ান, মহম্মদপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ আবু আব্দুল্লাহেল কাফি, মধূখালি উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মনিরুজ্জামান বাচ্চু, আলফাডাঙ্গা পরিষদ চেয়ারম্যান একে এম জাহিদুল হাসান, আমিনুর রহমান কলেজের অধ্যক্ষ ও প্রেসক্লাব মহম্মদপুরের সভাপতি বিপ্লব রেজা বিকো, মহম্মদপুর থানার ওসি তারক বিশ^াস, প্রাণ আপ গ্রুপের নির্বাহী পরিচালক মোঃ আনিসুর রহমান, জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক হাজী মোঃ মকবুল হোসেন এবং উপজেলা ক্রীড়া সংস্থার আহবায়ক মিজানুর রহমান মিলন প্রমূখ।
মেলার আইন শৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশের কয়েক স্তরের নিরাপত্তার পাশাপাশি রাখা হয় সহস্রাধিক স্বেচ্ছাসেবক কর্মী। সেই সাথে রাখা হয় ফায়ার সার্ভিসের দল। এবং অনাকাঙ্খিত ঘটনা এড়াতে পুরো মেলা এলাকা গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করা হয়। বীরেন শিকদার অতিথিদের সাথে ইঞ্চিন চালিত বোটে চড়ে নৌকা বাইচ উপভোগ করেন। নৌকা বাইচ শেষে অতিথিরা বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করেণ।
প্রতিযোগিতায় টালাই গ্রুপে প্রথম স্থান অধিকার করে খুলনার ভাই-ভাই জলপরি, ২য় স্থান অধিকার করে নড়াইলের কাসেম মোল্যার নৌকা ও ৩য় স্থান অধিকার করে মাগুরার আলতাফ মোল্যার নৌকা। এছাড়া ও কালাই গ্রুপের প্রথম স্থান অধিকার করে কালিশংকরপুরের কবির মিয়ার নৌকা, ২য় স্থান অধিকার করে আলফাডাঙ্গার কালু ফকিরের নৌকা ও ৩য় স্থান অধিকার করে আলফাডাঙ্গার নজির মেম্বরের নৌকা।