বিশেষ প্রতিনিধি, মাগুরাবার্তা
বয়েস ৯০ বছর । স্বামী মারা গেছেন ৫০ বছর আগে। জন্ম থেকেই শারীরিক প্রতিবন্ধী। সরকারের ঘোষণা ও নীতিমালা অনুযায়ি মাজু বিবি বয়স্ক, বিধবা ও প্রতিবন্ধী ভাতা পাওয়ার দাবিদার। অথচ ৪০ বছর ধরে চেষ্টা করেও একটি ভাতার কার্ড পাননি তিনি। অনেকের পেছনে ঘুরেছেন ভাতার জন্য। সবার একই কথা ভাতার কার্ড পেতে টাকা দিতে হবে। একটা সময় মাজু বিবি হাল ছেড়ে দেন- তাঁর টাকা নেই বলে ভাতা হবে না। অবশেষে জীবন সায়হ্নে এসে মাজু বিবি মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো: মিজানূর রহমান ও সমাজ সেবা কর্মকর্তা মো. জয়নুর রহমানের উদ্যেগে তিনি একটা বিধবা ভাতার কার্ড হাতে পেয়েছেন। চলতি মাসে ৬ হাজার টাকাও তুলেছেন তিনি। জীবন সায়হ্নে এসে ভাতা পাওয়ায় মাজু বিবির মুখে হাসির ঝিলিক চোখে আনন্দ অশ্রু।
মাজু বিবির বাড়ি উপজেলার দীঘা ইউনিয়নের শির গ্রামে। তিনি মৃত জব্বার মোল্যার স্ত্রী ।
সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, মাজু বিবি জন্ম থেকে শারীরিক প্রতিবন্ধী। পায়ের দুটি পাতা মোড়ানো। জাতীয় পরিচয়পত্রে বয়স ৮৩ বছর। বাস্তবে বয়স ৯০ এর উপরে বলে জানান প্রতিবেশীরা। স্বামী মারা গেছেন ৫০ বছর আগে।  স্বামী মৃত্যুর পর অন্যের বাড়িতে পেটে-ভাতে খেয়ে কাজ করে দিন চালাতেন। বয়সের কারেণ এখন আর কাজ করতে পারেন না। একমাত্র ছেলে দিদার মোল্যার উপর নির্ভরশীল। দিদার পরের ক্ষেতে দিনমজুরের কাজ করে মা স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে খেয়ে না খেয়ে কষ্টে সংসার চালান। সম্পত্তি বলতে চার শতাংশ জমির উপর একটি চার টিনের চাল আর পাটকাঠির বেড়ার ভাঙ্গাচোরা ঘরে তাদের বসবাস। পুরনো টিনের চালের ছিদ্র দিয়ে পড়া বৃষ্টির পানি ঠেকাতে ব্যবহার করা হয়েছে পলিথিন। চার যুগের বেশি সময় বিধবা মাজু বিবির খোঁজ নেয়নি কেউ। খেয়ে না খেয়ে, অনাহারে-অর্ধাহারে কেটেছে তাঁর দিন।
স্থানীয় বাসিন্দা কবি আকাহিদ হোসেন মাজু বিবির বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো: মিজানূর রহমান ও সমাজ সেবা কর্মকর্তা মো. জয়নুর রহমানের নজরে আনেন। তাৎক্ষণিক তাঁরা ভাতার ব্যবস্থা করে দেন। তিনি জানান, মাজু বিবি ভাতা প্ওায়ার যোগ্য পাওনাদার। তাঁর মতো অসহায় একজনের জন্য কিছু করতে পেরে ভালো লাগছে।
মাঝু বিবির একমাত্র ছেলের বউ তহমিনা (৪০) জানান, পূর্বে অনেকেই কার্ড করে দিতে চেয়েছেন কিন্তু বিনিময়ে টাকা চেয়েছেন। টাকা দিতে না পারায় কোনও সরকারি সুবিধা আমরা পাইনি।
প্রতিবেশি সউদ মোল্যা (৭৫) বলেন, মাঝু বিবির সংসার বড় কষ্টে চলে যখন জানতে পারলাম তার একটি বয়স্ক ভাতার কার্ড হয়েছে তখন খুব ভাল লেগেছে।
উপজেলা সমাজ সেবা কর্মকর্তা জয়নুর রহমান বলেন, মাঝু বিবির আবেদনের তালিকা যখন আমার হাতে আসে তখন অবাক হয়েছিলাম। শারিরিক প্রতিবন্ধী, বিধবা, এমনকি বয়স্ক ভাতা সকল সুবিধার যে কোনও একটি তার অনেক আগেই পাবার কথা ছিল। অবশেষে আমরা কার্ডটি করে দিয়েছি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো মিজানুর রহমান বলেন, উপজেলার দরিদ্র মানুষের সঠিক পাওনাটা বুঝিয়ে দিতে সকল দপ্তরের কর্মকর্তা কর্মচারীরা দিন-রাত পরিশ্রম করেছে। সরকারের দেওয়া সকল সুবিধা সুন্দরভাবে মানুষকে বুঝিয়ে দিতে পেরেছি। যদি কেউ বাদ পড়ে থাকে তাহলে তারা সরাসরি আমার সাথে যোগাযোগ করলে সঠিকভাবে যাচাই বাছাই করে সুবিধা প্রদান করা হবে।

 

মাগুরা/ মহম্মদপুর/ ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২০