বিশেষ প্রতিনিধি, মাগুরাবার্তা
সকল নিয়ম নীতি, আইনকানুন উপেক্ষা করে মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলার  নহাটা গ্রামে নাবালিকা কণ্যার ধর্ষনের ঘটনায় অবৈধ শালিস, চাঁদাবাজি ও নির্যাতনের ‍অভিযোগ পাওয়া গেছে। এখানেই শেষ নয় উপরন্তু গ্রাম্য প্রভাবশালীরা ওই নাবালিকার পরিবারকে গ্রাম্য শালিসের নামে তার বাড়িঘরে লুটপাট চালিয়েছে। আর এ ঘটনায় অভিযোগের তীর স্বয়ং মহম্মদপুর উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও নহাটা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মোস্তফা কামাল লিটনের দিকে। যা তিনি এখন বেমালুম  অস্বীকার করেছেন। এ ঘটনায় মহম্মপুর থানায় মামলা হয়েছে। ইতিমধ্যে ওই ঘটনার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে ৩ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

খবরে প্রকাশ পার্শ্ববর্তী  ধর্ষনের শিকার হয়ে ৮ম শ্রেণীর ও ছাত্রী (১৫) মাগুরা সদর উপজেলার বেরইল পলিতা ইউনিয়নের ভাঙ্গুড়া গ্রামের শহিদুল ইসলামের ছেলে শাহাবুল ইসলামের  (১৯) দ্বারা ধর্ষি ত হয়ে অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ে। পারিবারিকভাবে মিমাংসা করতে ব্যার্থ  হয়ে এ ঘটনায় ওই যুবককে  আসামি করে মামলা করা হয়েছে। মামলার পর কলেজছাত্র শাহাবুলকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এমনিতেই যখন অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়া মেয়েটির পরিবার বিপাকে পড়েছে। মরার উপর খাড়ার ঘা হিসেবে ওই পরিবারটিকেই দোষী সাব্যস্ত করে গ্রাম্য সালিসে ১ লাখ ২৫ হাজার টাকা ‘জরিমানা’ করেন স্থানীয় কিছু আওয়ামী লীগ নেতা ও তাদের অনুসারিরা। কথিত জরিমানার টাকা দিতে না পারায় সোমবার পরিবারটির গরু, ছাগল, সেচযন্ত্র, ভ্যান, বাইসাইকেলসহ বেশ কিছু জিনিস বাড়ি থেকে ছিনিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে যা পুলিশ   উদ্ধার করেছে।

জানা গেছে- গত  ১৬ জুলাই অষ্টম শ্রেণির ছাত্রীটিকে ধর্ষণের অভিযোগে মহম্মদপুর থানায় মামলা করেছে ভুক্তভোগী পরিবারটি। মামলায় মাগুরা সদর উপজেলার বেরইল পলিতা ইউনিয়নের ভাঙ্গুড়া গ্রামের শহিদুল ইসলামের ছেলে শাহাবুল ইসলামকে (১৯) আসামি করা হয়েছে। মামলার পর কলেজছাত্র শাহাবুলকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

স্থানীয় সূত্র জানায়, ৮ জুলাই ধর্ষণের অভিযোগ নিয়ে মহম্মদপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও নহাটা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মোস্তফা সিদ্দিকি ওরফে লিটনের কাছে যান ওই কিশোরীর চাচা। দুই দিন পর ১০ জুলাই ভুক্তভোগী পরিবারের বাড়ির পাশে একটি জায়গায় সালিস বসানো হয়। মোস্তফা সিদ্দিকির নেতৃত্বে ওই সালিসে শতাধিক মানুষ উপস্থিত ছিলেন। সালিসে বিয়ের আগে অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার অভিযোগে ভুক্তভোগী পরিবারকে ১ লাখ ২৫ হাজার টাকা জরিমানা করে টাকা পরিশোধের জন্য ১০ দিনের সময় বেঁধে দেওয়া হয়। একই সঙ্গে ছয় মাসের জন্য পরিবারটিকে সমাজচ্যুত করেন সালিসকারীরা। ওই পরিবারের সঙ্গে কোন প্রকার যোগাযোগকারি যে কাউকে ২৫হাজার টাকা জরিমানা করা হবে বলেও হুমকি দেয়া হয়। সেই সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে পুলিশের কাছে না যাওয়ার জন্যও পরিবারটিকে জানিয়ে দেয় শালিস কারিরা।

ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা অভিযোগ করেন, সালিসে দাবি করা কথিত জরিমানার টাকা তাঁরা দিতে ব্যর্থ হওয়ায় বাড়িতে চড়াও হন নেতারা। গতকাল সকালে ভুক্তভোগীদের বাড়িতে যায় নহাটা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক সদস্য ওবায়দুর রহমানের নেতৃত্বে কয়েকজন। তাঁরা বাড়ি থেকে একটি গরু, চারটি ছাগল, একটি সাইকেল, ভ্যান, শ্যালো মেশিনসহ বেশ কিছু জিনিস ছিনিয়ে নিয়ে যান তাঁরা। খবর পেয়ে পুলিশ ছিনিয়ে নেওয়া অধিকাংশ মালামাল উদ্ধার করে।

এ ঘটনায় পরিবারটি একটি অবৈধ শালিস ও চাঁদাবাজির মামলা করেছে জানিয়ে মহম্মদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তারক বিশ্বাস বলেন, ধর্ষণের ঘটনা কোনক্রমেই শালিসযোগ্য নয়। আর এনিয়ে চাঁদাবাজি ক্রিমিনাল অফেন্স। ওই মামলায় আওয়ামী লীগ নেতা মোস্তফা কামাল সিদ্দিকি, ওবায়দুর রহমানসহ ১৬ জনকে আসামি করা হয়েছে। ঘটনার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে ৩জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

নিজের বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা কামাল সিদ্দিকি লিটন । মোস্তফা কামাল সিদ্দিকি শালিশের বিষয়টি পুরো অস্বীকার করে সাংবাদিকদের জানান , ‘এ ধরনের কোনো সালিসেই হয়নি। সেখানে আমি উপস্থিত ছিলাম না। পরিবারটি আমার সাথে দেখা করে সহযোগিতা চাইলে আমি  আমি তাঁদের সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছি।ষড়যন্ত্রমুলকভাবে কেউ তাদের দিয়ে এ ধরণের অভিযোগ করাচ্ছে। ’

মাগুরা/ ২১ জুলাই ২০২০