বিশেষ প্রতিনিধি, মাগুরাবার্তা
সারাদেশে করোনায় থমকে গেছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম ।  মাগুরাতেও প্রাইভেট কেজি স্কুলের কার্যক্রমও থেমে গেছে । মহামারি করোনার ছোবলে হারিয়ে গেছে অনেক প্রাণ । সরকার সারাদেশের কোমলমতি শিশুদের কথা চিন্তা করে করোনার সংক্রমন রোধে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখেছে । কিন্তু এ পেশার সাথে জড়িত প্রাইভেট কেজি স্কুলের শিক্ষক-কমচারীরা রয়েছে বিপাকে । মাগুরা জেলায় প্রায় শতাধিক প্রাইভেট কেজি স্কুলের ৮শতাধিক শিক্ষক-কর্মচারীরা প্রতিষ্ঠনের নিয়মিত মাসিক বেতন না পেয়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছে ।
সরজমিন অনুসন্ধান করে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে ,করোনার কারণে জেলা ও উপজেলার প্রাইভেট কেজি স্কুলগুলো বন্ধ রয়েছে । কিছু কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শুধু অফিস খোলা রেখে বসে আছে । আবার অনেক প্রতিষ্ঠান অনলাইনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের পাঠে মনোনিবেশ করার জন্য ক্লাস শুরু করেছে । মাগুরাতে পৃথক তিনটি কেজি এসোসিয়েশন রয়েছে। জেলায় মোট প্রাইভেট কেজি স্কুলের সংখ্যা ৯২ টি । শিক্ষক কর্মচারী রয়েছে প্রায় ৮ শতাধিক ।
মাগুরা জেলা কিন্ডার গার্টেন এসোসিয়েশনের সভাপতি  মো: বশিরুর ইসলাম জানান, গত ১৭ মার্চেও পর স্কুল বন্ধ রয়েছে । আমরা সরকারের সাথে সঙ্গতি রেখে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনা করি । সারাদেশে করোনা সংক্রমনের কারণে স্কুল বন্ধ রয়েছে । আমরা সরকারের সিদ্ধান্তের বাইরে নয় । সরকার যেদিন স্কুল খোলার অনুমতি দেবে আমরা সেদিন খুলবো । প্রায় ৪ মাস যাবৎ স্কুল বন্ধ থাকার কারণে আমাদের শিক্ষকদের মানবেতর জীবন-যাপন করতে হচ্ছে । কারণ আমাদের নিজস্ব কোন আয় নেই । স্কুলের ছাত্র বেতনের উপর ভরসা করেই আমাদের প্রতিষ্ঠান চলে ।  ৪ মাসে কোনো শিক্ষককে বেতন দিতে পারিনি । আবার করোনার কারণে অনেক শিক্ষকের প্রাইভেট পড়ানো বন্ধ রয়েছে । ফলে অনেক শিক্ষক বাধ্য হয়ে জীবন-জীবিকার তাগিদে শহরে অটো রিক্সাও পর্যন্ত চালাচ্ছে । এ দু:খের কথা আমরা কাদের কাছে বলবো । আমাদের বিষয়টি নিয়ে আমরা  জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নিকট অবগত করেছি । তারা বিষয়টি দেখবেন বলে জানিয়েছেন ।
অপর দুটি কেজি এসোসিয়েশনের সভাপতি নাজমুল হাসান ও সিরাজুল ইসলাম জানান, করোনার কারণে আমাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে । গত মার্চ  থেকে জুন পর্যন্ত আমরা কোন শিক্ষককে মাসিক বেতন দিতে পারিনি । পারিনি কোন সহযোগিতা করতে । কারণ আমরা নিজের টাকা খরচ করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়েছি । আমাদের আয়ের প্রধান উৎস স্কুলের সম্মানিত অভিভাবক । তাদের আর্থিক বেতনের টাকায় আমরা প্রতিষ্ঠান চলে । কিন্তু বর্তমানে আয়ের উৎস বন্ধ থাকায় আমাদের শিক্ষক কর্মচারীরা মানবেতর জীবন-যাপন করছে । এ পর্যন্ত আমরা কোনো সরকারি সহযোগিতা পাইনি । আমাদের বিষয়টি আমরা লিখিত আকারে সংসদ সদস্য মাগুরা-১, জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিকট পেশ করেছি । তারা আমাদের আশ্বস্ত করেছেন যে, বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে জানিয়ে ব্যবস্থা নেবেন । আমরা আশা করছি নন-এমপিও প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীরা যদি সরকারি প্রনোদনা পায় থাকলে আমাদের কথাও সরকারের একটু বিবেচনার মধ্যে নেয়া উচিত । কারণ আমরা সরকারের সাথে এক হয়ে কাজ করি । ভ্যাট দিই ,সকল সরকারি দিবস ,অনুষ্ঠানে আমরা অংশ নিই । তাই আমরা সরকারের কাছে শিক্ষকদের মানবেতর জীবন-যাপন তুলে ধনে প্রনোদনা দাবি করছি ।
মাগুরা ব্রাইট কেজি স্কুলের প্রধান শিক্ষক  ফারুকুর রহমান জানান, আমার প্রতিষ্ঠানের মোট ৯জন শিক্ষক-কর্মচারী রয়েছে । মোট শিক্ষার্থী ১৫০ জন । আমার বাবার পেনশনের টাকা ও লোন নিয়ে প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তোলার চেষ্টা করছি । করোনার কারণে প্রায় ৪ মাস স্কুল বন্ধ থাকার কারণে শিক্ষক-কর্মচারীদের কোনো বেতন দিতে পারিনি । তাই তারা মানবেতন জীবন-যাপন করছেন । তাদের মুখের দিকে তাকালে অনেক কষ্ট হয় । আবার অনেকে বাড়িতে টিউশনি করে চলে কিন্ত তাও বন্ধ থাকায় অনেকে গ্রামে চলে গেছে । সব মিলেয়ে অসহায় অবস্থায় আছি ।
স্কুল শিক্ষক ইমরান জানান, আমি রাষ্টবিজ্ঞানে অর্নাস-মাষ্টার্স করেছি ।  চাকুরির পিছনে দৌড়াতে দৌড়াতে অবশেষে কেজি স্কুলের শিক্ষক ও প্রাইভেট পড়িয়ে জীবিকা নির্বাহ করি । কিন্ত বর্তমানে করোনার কারণে স্কুল ও বাড়িতে বাড়িতে প্রাইভেট পড়ানো বন্ধ হয়ে যাওয়ায় পরিবার নিয়ে বিপাকে আছি ।
শাহ আলম নামে ষাটোর্ষ  এক স্কুল শিক্ষক জানান, নিজের জমি বিক্রি করে প্রতিষ্ঠান গড়েছি । আজ ২০ বছর আমার স্কুলের বয়স । কোনো দিন কোনো সমস্যায় থেমে থাকেনি । কিন্তু মহামারি করোনার  ছোবলে আটকে গেছি । ভাড়া বাড়িতে প্রতিষ্ঠান চালাই, ভাড়া বাড়িতে থাকি । বাড়িওয়ালা তিন মাসের ভাড়া পাবে । শিক্ষকরা চার মাসের বেতন পাবে । এখন আমি সব মিলে পাগল প্রায় । নিজের খাবার যোগাতে না পেরে মাঝে মাঝে আর্থিক অনটনের কারণে শ্বশুরবাড়ি গিয়ে থাকি । তাই সরকার যদি আমাদের সহযোগিতা না করে ভবিষ্যতে প্রতিষ্ঠান বিক্রি করে পথে বসতে হবে ।
মাগুরা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু সুফিয়ান জানান , জেলা প্রাইভেট কেজি এসোসিয়েশনের শিক্ষকবৃন্দ তাদের নানা সমস্যার বিষয়ে আমাদের জানিয়েছে । আমি জেলা প্রশাসককে বিষয়টি জানিয়েছি । আমরা তাদের সামান্য কিছু খাদ্য সামগ্রীর সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছি ।পরবতীতে উধ্বর্তন কতৃপক্ষকে আমরা তাদের বিষয়টি জানিয়ে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহন করব ।

মাগুরা/ ৭ জুলাই ২০২০