মাগুরার পারনান্দুয়ালী গ্রামের কৃতি সন্তান তৎকালীন বাংলাদেশ রাইফেলস্ (বর্তমান বিজিবি) এর নিজস্ব  ৪৩তম  প্রথম শ্রেণীর গেজেটেড অফিসার বীর মুক্তিযোদ্ধা গোলাম সরওয়ার এর আজ ৩য় মৃত্যু বার্ষিকী।

চাকুরী জীবন: ১১ নভেম্বর ১৯৫৭ থেকে ২ ডিসেম্বর ১৯৯৪ ইং।

১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে গোলাম সরওয়ার ৮ নং সেক্টর এ ইপিআর এর ৪নং উইং এ ক্যাপ্টেন এ আর আজম চৌধুরী’র অধীনে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন; লালবাজার, বেতাই।
গেজেট:- বিজিবি গেজেট, নং-৫০৮ মাগুরা  জেলা।
(গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের  ওয়েব সাইটে প্রকাশিত)

চাকুরী জীবনে গোলাম সওয়ার (স্বাধীনতা যুদ্ধ পদক) সমর পদক, জয় পদক, মুক্তি তারকা ,সংবিধান পদক,
দাবানল পদক,ঘূর্ণিঝড় পদক ১৯৯১, জাতীয় সাধারণ নির্বাচন পদক ১৯৯১,
এছাড়াও ১৯৬৫ সালে ইন্দো-পাক যুদ্ধে তাম্গা-ই-জং এবং সিতারা-ই-হাব পদক লাভ করেন।

প্রথম চাকুরীস্থল ৪ নং উইং  এবং শেষ চাকুরীস্থল ১৩ ব্যাটালিয়ন, চুয়াডাঙ্গা। (১৩ ব্যাটালিয়ন ২০১০ সালের পর বিলুপ্ত)

অবসর : ১ ডিসেম্বর ১৯৯৫ ইং।
জন্ম: ৩ ডিসেম্বর ১৯৩৭ ইং পারনান্দুয়ালী মোল্যা পাড়া, মাগুরা (তৎকালীন যশোর জেলা)।

মৃত্যু: ২৭ জুন ২০১৭ মঙ্গলবার দুপুর ১:৩০ মিনিট, ঢাকা। মাতা : ফুলজান বিবি এবং পিতা : তোফাজ উদ্দিন মোল্লা।
স্ত্রী : মোসাঃ জাহানারা খাতুন (বিবাহ ১৯৫১ সালের ২ জুন)

* ভাই-বোন: ৪ ভাই
আব্দুল বারিক মোল্লা ব্রিটিশ ইন্ডিয়ান আর্মি (অব:), মেঝো ভাই নিজাম উদ্দিন মোল্লা,সেজো ভাই কাওসার মোল্লা।
চার ভাইয়ের মধ্যে গোলাম সরওয়ার সবার ছোট।
* স্কুল জীবন
মামাবাড়ি বালিয়াডাঙ্গাতে তৎকালীন যশোর জেলার আলুকদিয়া উচ্চ বিদ্যালয় থেকে তিনি ১৯৫৬ সালে ম্যাট্রিকুলেশন পাশ করেন।
* বৈবাহিক জীবন মোসাঃ জাহানারা খাতুন বিজিবি কর্মকর্তা বীর মুক্তিযোদ্ধা গোলাম সরওয়ার এর স্ত্রী
ফরিদপুর জেলার নিশ্চীন্তপুর গ্রামের এক মুসলিম পরিবারের মোঃ আমির হোসেন মোল্লা এবং আয়শা বিবি  এর বড় কন্যা মোসাঃ জাহানারা খাতুন এর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন।

* প্রশিক্ষণ
আনসার এবং ইপিপি
গোলাম সরওয়ার ১৯৫৬ সালে আনসারের ব্যাসিক ট্রেনিং গ্রহণ করেন।
পরবর্তীতে ১৯৫৭ সালের শুরুর দিকে ফরিদপুর জেলা সদর থেকে কনস্টেবল পদে যোগদান করেন এবং সারদা পুলিশ একাডেমী, রাজশাহীতে ট্রেনিং শুরু হয়। ম্যাট্রিকুলেশন পাশ থাকায় উনাকে  কনস্টেবলদের সাথে পাসিং আউট না দিয়ে সাব-ইন্সপেক্টরদের সাথে আইন সম্পর্কিত কোর্স সম্পন্ন করিয়ে ৮ মাস পর কনস্টেবল পদেই  ফরিদপুরে বদলী করা হয় এবং ট্রেনিং এর পর মাত্র ১ মাস পুলিশে চাকুরী করেন।
বি:দ্র: ৩ মাস পর সহকারী সাব-ইন্সপেক্টর এ পদোন্নতী দেয়া হবে এই মর্মে আদেশ জারী করেন।
* ইষ্ট পাকিস্তান রাইফেলস্ (ইপিআর) এ যোগদান ১৯৫৭ সালে ১১ নভেম্বর তিনি তৎকালিন ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলস্ এ যোগদান করে উনার কর্মজীবন শুরু করেন। ৪নং উইং কোটচাঁদপুর থেকে চুয়াডাঙ্গা ১১/১১/১৯৫৭ থেকে ১৯৬৯।

গোলাম সরওয়ার 2
* ২য় চাকুরীস্থল

দিনাজপুর সেক্টরের কোয়ার্টার মাস্টার হাবিলদার সহকারি ১৫/০৪/১৯৬৯ থেকে ১৯৭১ এর এপ্রিল এর প্রথম সপ্তাহ।
* ৩য় চাকুরীস্থল

৪নং উইং , চুয়াডাঙ্গা সাবসেক্টর এর ‘‘সি’’ কম্পানীতে ,  লালবাজার, বেতাই-ভারত ১৮ এপ্রিল ১৯৭১  থেকে ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১।
* চতুর্থ চাকুরীস্থল

৪নং উইং , চুয়াডাঙ্গা সাবসেক্টর, চুয়াডাঙ্গা সদর ব্যাটালিয়ন, চুয়াডাঙ্গা ১৯ ডিসেম্বর ১৯৭১ থেকে ১৯৭২ এপ্রিল।
* পঞ্চম চাকুরীস্থল

স্বাধীন বাংলাদেশে পূর্বের কর্মস্থল দিনাজপুর সেক্টরের কোয়ার্টার মাস্টার হাবিলদার সহকারি ১৯৭২ এপ্রিল থেকে ১/১০/১৯৭২।

*     জেসিও

জুনিয়র-কমিশন্ড অফিসার (৮৩০) তারিথ: ০১/১০/১৯৭২ ইং।

* ষষ্ঠ চাকুরীস্থল
চট্টগ্রাম এ ১৪ নং উইং এর প্রশাসনিক দপ্তরের প্রধান নায়েব সুবেদার সহকারি ১৯৭২ শেষ ১৯৭৩ এর শুরু।
* সপ্তম চাকুরীস্থল
রামগড় এ ১৪ নং উইং এর প্রশাসনিক দপ্তরের প্রধান নায়েব সুবেদার সহকারি ১৯৭৩ থেকে ১৯৭৪ ।

* অষ্টম চাকুরীস্থল
কক্সবাজার এ প্রশাসনিক দপ্তরের প্রধান নায়েব সুবেদার সহকারি ১৯৭৪ থেকে ১৯৭৭ ।

* নবম চাকুরীস্থল
নেত্রকোনা জেলাতে ১৫ ব্যাটালিয়ন এর প্রশাসনিক দপ্তরের প্রধান নায়েব সুবেদার সহকারি ১৯৭৭থেকে ১৯৮০ ।

* দশম চাকুরীস্থল
পিলখানা-ঢাকা সদর দপ্তরের ইএমই এর প্রশাসনিক দপ্তরের প্রধান নায়েব সুবেদার সহকারি ১৯৮০ থেকে ১৯৮২ ।
* একাদশ চাকুরীস্থল
১৯৮২তে সুবেদার সহকারি হিসেবে পদোন্নতী পেয়ে পিলখানা-ঢাকা সদর হাসপাতালে বদলী হলেও

২৬/০২/১৯৮২তে ১ম শ্রেণীর গেজেটেড অফিসার হয়ে  ১৫ ব্যাটালিয়ন এ আবার বদলী হওয়ায় সদর হাসপাতালে সুবেদার হিসেবে যোগদান করা হয়নি।

* তৎকালীন বাংলাদেশ রাইফেলসের (বর্তমান বিজিবিতে) কমিশন্ড অফিসার

প্রশাসনিক দপ্তরের জুনিয়র কমিশন্ড অফিসারগণ ( স্ব-স্ব অধিনায়ক কতৃক সুপারিশকৃত)

প্রথম শ্রেণীর গেজেটেড অফিসার হবার পরীক্ষা দেবার অনুমতি পান।
১৯৮৯ থেকে সকল শাখার জুনিয়র অফিসারগণ পরীক্ষা দেবার সুযোগ পান।

লিখিত পরীক্ষা,মৌখিক পরীক্ষা এবং ফিল্ড টেস্ট/প্রাকটিক্যাল পরীক্ষা সবগুলোই বাংলাদেশ সেনাবাহিনী অফিসার দ্বার পরিচালিত।

* গোলাম সরওয়ার এর ১ম শ্রেণীর গেজেটেড অফিসার/ কমিশন্ড অফিসার হওয়া ২৬/০২/১৯৮২ তারিখে মেজর জেনারেল মোহাম্মাদ আতিকুর রহমান নিজে  এবং পরিচালক প্রশাসন (কর্নেল)  ১ম শ্রেণীর গেজেটেড  অফিসার এর র‌্যাংক-ব্যাজ পরিয়ে দেন গোলাম সরওয়ারকে। তিনি বিজিবি’র ৪৩ তম নিজস্ব কর্মকর্তা। সাথে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত মহাপরিচালক (ব্রিগেডিয়ার জেনারেল), পরিচালক যোগাযোগ এবং পরিচালক অপারেশন ও  প্রশিক্ষণ (কর্নেল)। ঐদিনই আরও ২ জন অফিসার হন।

* অফিসার এর মৌলিক প্রশিক্ষণ
চট্টগ্রাম এর বাইতুল ইজ্জত রাইফেলস ট্রেনিং স্কুল বর্তমান  বিজিটিসিএ্যান্ডএস এ কোর্স সম্পন্ন করেন।

*  কমিশন্ড অফিসার      =    রাইফেলস্ ডিপার্টমেন্টাল অফিসার ৪৩ (আরডিও : ৪৩) তারিখ ২৬/০২/১৯৮২ ইং।

* দ্বাদশ চাকুরীস্থল             =    কর্মকর্তা হিসেবে প্রথম ১৫ ব্যাটালিয়ন নীলডুমুর, সাতক্ষীরাতে দায়িত্ব পালন করেন ১৯৮২ সালে।
অধিনায়ক মেজর আলা উদ্দিন, উপ-অধিনায়ক,অ্যাডজুটেন্ট এবং কোয়ার্টার মাস্টার গোলাম সরওয়ার, মেডিক্যাল অফিসার ক্যাপ্টেন।

* ত্রয়োদশ চাকুরীস্থল          =    ২৭ ব্যাটালিয়ন  ফেনী ১৯৮২ সালের শেষ  থেকে ১৯৮৪ এর শেষ ভাগ।
অধিনায়ক মেজর আক্তারুজ্জামান, ভারপ্রাপ্ত উপ-অধিনায়ক,অ্যাডজুটেন্ট এবং কোয়ার্টার মাস্টার  গোলাম সরওয়ার, মেডিক্যাল অফিসার ক্যাপ্টেন।

* চতুর্দশ চাকুরীস্থল            =    ২৯ ব্যাটালিয়ন  জামালপুর ১৯৮৪ সালের শেষ  থেকে ১৯৮৬ এর শেষ ভাগ।
অধিনায়ক মেজর সাহাব উদ্দিন, ভারপ্রাপ্ত উপ-অধিনায়ক,অ্যাডজুটেন্ট এবং কোয়ার্টার মাস্টার  গোলাম সরওয়ার, মেডিক্যাল অফিসার ক্যাপ্টেন।

* পঞ্চদশ চাকুরীস্থল            =    ১৯ ব্যাটালিয়ন নাইক্ষ্যংছড়ি, বান্দরবান ১৯৮৬ সালের শেষ  থেকে ১৯৮৮ এর শেষ ভাগ।  অধিনায়ক মেজর সাঈদ, অ্যাডজুটেন্ট এবং কোয়ার্টার মাস্টার  গোলাম সরওয়ার, মেডিক্যাল অফিসার ক্যাপ্টেন।

* ষষ্ঠদশ চাকুরীস্থল              =    ২১ ব্যাটালিয়ন চুয়াডাঙ্গা ১৯৮৮ সালের শেষ  থেকে ১৯৯০ এর শেষ ভাগ।
অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আক্তারুজ্জামান, কোয়ার্টার মাস্টার  গোলাম সরওয়ার, মেডিক্যাল অফিসার ক্যাপ্টেন।

* সপ্তদশ চাকুরীস্থল             =     খাগড়াছড়ি ব্যাটালিয়ন ১৯৯০ সালের শেষ  থেকে ১৯৯১ মাঝামাঝি সময়।

* অষ্টাদশ চাকুরীস্থল            =     পিলখানা ঢাকা সদর সপ্তরের রেকর্ড উইং এর সহকারী রেকর্ড অফিসার ১৯৯১ এর মাঝামাঝি থেকে ১৯৯৩ এর মাঝামাঝি।   সিনিয়র রেকর্ড অফিসার লেফটেন্যান্ট কর্নেল সিরাজ, রেকর্ড অফিসার মেজর…, সহকারী রেকর্ড অফিসার  গোলাম সরওয়ার।

* উনিশতম এবং শেষ চাকুরীস্থল          =    কর্মকর্তা হিসেবে শেষ দায়িত্ব পালন করেন ১৩ ব্যাটালিয়ন চুয়াডাঙ্গাতে ১৯৯৩ এর মাঝামাঝি থেকে ২ ডিসেম্বর ১৯৯৪ ইং।    ২০১০ সালের পর থেকে ১৩ ব্যাটালিয়ন বিলুপ্ত।

* অবসর

১৯৯৫ সালের ১ ডিসেম্বর থেকে বীর মুক্তিযোদ্ধা গোলাম সরওয়ার ৩৭ বছরের চাকুরী থেকে অবসরে যান।

* রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন ২০১৭ সালের ২৭ জুন মঙ্গলবার ইন্তেকাল করেন।  ২৮ জুন বীর মুক্তিযোদ্ধাকে গার্ড অব অনার প্রদান করা হয় এবং পারনান্দুয়ালী মোল্লা পাড়ার পারিবারিক কবরস্থানে তাঁর দাফন করা হয়।