বিশেষ প্রতিনিধি, মাগুরাবার্তা
সবার জন্য স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করা, বিনা চিকিৎসায় মৃত্যু বন্ধ করা এবং জাতীয় বাজেটের ২০% স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ করাসহ ১২দফা দাবীতে মাগুরায় করোনা দুর্যোগ মোকাবিলায় গণকমিটি  আজ ২৪ জুন মাগুরা শহরের চৌরঙ্গী মোড়ে মানববন্ধন করেছে । মানববন্ধনে সভাপতিত্ব করেন গণকমিটির আহ্বায়ক কাজী ফিরোজ ( আহ্বায়ক, বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টি মার্কসবাদী, মাগুরা জেলা) ও পরিচালনা করেন যুগ্ম সদস্য সচিব প্রকৌশলী শম্পা বসু (বাসদ, কেন্দ্রীয় পাঠচক্র ফোরামের সদস্য)। বক্তব্য রাখেন যুগ্ম আহ্বায়ক এটিএম মহব্বত আলী ( বাংলাদেশ জাসদ মাগুরা জেলা শাখার সভাপতি), বিশিষ্ট সমাজ সেবক কামরুজ্জামান চপল, বাংলাদেশ জাসদ মাগুরা জেলা শাখার সদস্য এ এফ এম বাহারুল হায়দার বাচ্চু । বক্তারা বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার চরম দুর্দশা ও অনিয়ম-অব্যবস্থাপনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বর্তমান সরকার ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় করোনা মোকাবেলায় সম্পূর্ণ ব্যর্থ। সরকার ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জনগণের স্বাস্থ্য ও খাদ্য নিরাপত্তা না দিয়ে করোনাকে পুঁজি করে ত্রাণ চুরিসহ স্বাস্থ্য খাতের চিকিৎসা সরঞ্জাম ক্রয়ে চরম অনিয়ম, দুর্নীতি-লুটপাটে ব্যস্ত। বর্তমান সময়কে মহামারী বা অতি মহামারী ঘোষণা করে সর্বদলীয় সমন্বিত উদ্যোগে করোনা মোকাবেলা করা এবং দেশ যেভাবে পরিচালিত হওয়া দরকার ছিল সরকার সকল বিরোধী রাজনৈতিক দল ও সুশীল সামজ-বিশেষজ্ঞদের দাবি উপেক্ষা করে সম্পূর্ণ উল্টো পথে হেঁটে অতীতের মতো এবারেও গতানুগতিক লুটপাটের এক বাজেট ঘোষণা করেছে। ডিজিটাল বাংলাদেশের কথা বলে, অনলাইন শিক্ষা, যোগাযোগ ও ব্যবসার কথা বলে মোবাইল ব্যবহারকারীদের ১০০ টাকায় ৩৩ টাকা ২৫ পয়সা কর আরোপ করা হয়েছে। বক্তাগণ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সরকার দেশের মানুষের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে, করোনা রোগীদের চিকিৎসা দিতে এবং নন করোনা রোগীদের চিকিৎসা দিতে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। নেতৃবৃন্দ বলেন, দেশবাসী আর একজন মানুষেরও বিনা চিকিৎসায় মৃত্যু দেখতে চায় না। নেতৃবৃন্দ বর্তমান পরিস্থিতিতে দুর্যোগকালীন বাজেট প্রণয়ন করে স্বাস্থ্য খাতে জাতীয় বাজেটের ২০ ভাগ বরাদ্দ, প্রত্যেক জেলা-উপজেলায় করোনা পরীক্ষার ল্যাব স্থাপন, দিনে কমপক্ষে ৫০ হাজার পরীক্ষা করা, ফিল্ড হাসপাতাল নির্মাণ, ডাক্তার, নার্সসহ ফ্রন্ট লাইনারদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করাসহ নিন্মোক্ত ১১ দফা দাবি মেনে নেওয়ার আহ্বান জানান। (১) জনগণের সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবার অধিকার নিশ্চিত এবং বাজেটে কমপক্ষে ২০% স্বাস্থ্যখাতে বরাদ্দ করা, সময়মতো অর্থছাড় ও বাস্তবায়ন করতে হবে। (২) প্রত্যেক জেলা-উপজেলায় করোনা পরীক্ষার ল্যাব স্থাপন করে উপজেলায় ২০০, জেলায় ৫০০ এবং সারাদেশে প্রতিদিন কমপক্ষে ৫০ হাজার করোনা পরীক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে। (৩) স্বাস্থ্য সামগ্রী ও সুরক্ষা উপকরণ কেনা ও সরবরাহ করার সাথে জড়িত দুর্নীতিবাজদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। (৪) নন করোনা রোগীদের কোন হাসপাতাল থেকে ফিরিয়ে দেয়া যাবে না, কোন বেসরকারি হাসপাতাল রোগী ফিরিয়ে দিলে তাদের শাস্তি দিতে হবে এবং হাসপাতাল রাষ্ট্রকর্তৃক অধিগ্রহণ করতে হবে। (৫) করোনা সংক্রমণ ব্যাধি ফলে সকল নাগরিকের টেস্ট এবং চিকিৎসা রাষ্ট্রীয় খরচে করতে হবে। (৬) করোনাকালে সকল বাণিজ্যিক বেসরকারি হাসপাতাল অধিগ্রহণ করে করোনা চিকিৎসায় ব্যবহার করতে হবে। (৭) চিকিৎসক, নার্স, চিকিৎসা সেবা কর্মী, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, ব্যাংক ও সংবাদ কর্মীসহ সম্মুখ সারির যোদ্ধাদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। (৮) করোনাকালে দায়িত্ব পালনকারীদের ঝুঁকিভাতা, বীমা ও সরকারি প্রণোদনার ব্যবস্থা করতে হবে। (৯) করোনাকালে কোন কারখানার শ্রমিক ছাঁটাই করা চলবে না, কোন মালিক শ্রমিক ছাঁটাই করলে ঐ কারখানা রাষ্ট্রীয়ভাবে অধিগ্রহণ করতে হবে। ছাঁটাইকৃত শ্রমিকদের পুনর্বাসন করতে হবে। (১০) করোনায় কর্মহীন-রোজগারহীনদের খাদ্য ও নগদ অর্থসহায়তা দিতে হবে। (১১) কৃষি, শিক্ষা, সামাজিক সুরক্ষা ও কর্মসংস্থান খাতে বাজেট বরাদ্দ বাড়াও এবং সামরিক, জনপ্রশাসনসহ অনুৎপাদনশীলখাতে বাজেট বরাদ্দ কমাতে হবে।