রমেশ বিশ্বাস
নোবেল কোভিড ১৯ দ্বারা আক্রান্ত হয়ে সারাবিশ্বে প্রতিনিয়ত অগণিত মানুষ মারা যাচ্ছে । আমি আগামীকাল করোনায় আক্রান্ত হয়ে বাঁচব কি না তা কে জানে? এই মহাবিপর্যায়ে দরজায় দাঁড়িয়ে এখনও আমরা যারা সরকার প্রদত্ত অসহায় মানুষের ত্রাণ দ্রব্য চুরি করছি, ধর্ষণের মত ঘৃণ্য অপকর্মের সহিত জড়িত আছি, কেউ কেউ অসদুপায়ে টাকার পাহাড় গড়ে তুলছি, শিক্ষকতার পেশায় নিযুক্ত হয়েও পঞ্চম শ্রেণির একজন শিক্ষার্থীকে ধর্ষণ করে নির্মমভাবে হত্যা করছি- কেন এই মনষ্যত্বহীন আচারণ আমাদের ? মানবতার কোন দোহাই আমরা পাড়ব ? কেন আমরা এভাবে মনুষ্যত্ব বিলুপ্তির পথে হাঁটছি? পৃথিবীতে অনেক মানুষ আছে কিন্তু সেই মানুষের যদি মনুষ্যত্ব না থাকে তাহলে কি ভয়ঙ্কর হতে পারে পৃথিবীর রুপ একবার ভাবুন তো? দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জাপানের হিরোশিমা ক্ষত বিক্ষত হয়েছিল, অগণিত মানুষ মারা গিয়েছিল ঠিক কিন্তু সেদিন মনুষ্যত্বকে মারতে পারেনি বলেই আজ হিরোশিমা প্রাণবন্ত বিশ্বের বুকে তারা আবার মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে সক্ষম হয়েছে। করোনা থেকে হয়ত আজ নয় কাল আমরা মুক্তি পাব। কিন্তু কি করে আমাদের তথাগত শিক্ষিত সমাজ মনুষ্যত্ব বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষা পাবে?এই শিক্ষিত সমাজই প্রতিনিয়ত বিবাহ বিচ্ছেদ করে সদ্যজাত সন্তানকে দুর্ব্বিষহ যন্ত্রণার আতুর ঘরের জন্ম দিচ্ছে। জানি না নোবেল কোভিড-১৯ এর সংক্রমণের হাত থেকে রক্ষা পেতে লক ডাউন মানতে যেয়ে ,ঘরে থাকতে যেয়ে- কত ঘর যে ভাঙ্গছে! এই দুঃসময়ে তার হিসাব রাখে কে?এই ঘরের থেকেই মনুষ্যত্বহীনতার জন্ম হচ্ছে।তাই শত চেষ্টা করেও প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ভাল মানুষ তৈরি করতে পারছে না। রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের মতে- এক একটা পরিবারই এক একটা শাশ্বত বিদ্যালয়। আধুনিকতার ছোঁয়ায় সেই পরিবার আজ মনুষ্যত্ববিলুপ্তির পথে চলছে। হাজার হাজার বছর ধরে অনেক ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্যেও অনেক চড়াই উতরাই অতিক্রম করে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন শত্রুর আক্রমনে ক্ষত-বিক্ষত হয়েও আমরা ভারতবর্ষের মানুষ ভারতীয় সভ্যতায় ঠিকে ছিলাম। বর্তমান পাশ্চাত্যের অপসংস্কৃতি আমাদের মনুষ্যত্বে স্থান গেড়ে নিয়েছে। জানি না আর কতদিন আমরা আমাদের মনুষ্যত্বকে টিকিয়ে রাখতে পারব ? আমাদের সমাজের এ ভাঙ্গনের শব্দ শুনতে পেয়ে বাংলার প্রখ্যাত কবি রফিক আজাদ কাবিক্য ছন্দে লিখেছেন-

এ যুগে বেহুলা নেই

ঘরে ঘরে শুধু লখিন্দর

চাঁদবিনে বৃদ্ধবাপ বিছানার বাণপ্রস্থে

ভাতৃবর্গ গেছে ভেসে বিপরীত বাণিজ্য বাতাসে

তৃষ্ণার্ত শরীর নিয়ে এ তুমি কোথায় চলেছ নারী?

আজকের সমাজে বেহুলা, সীতা, সাবিত্রী, দয়মন্তী, আছিয়া, রহিমা ও খাদিজার মত সতী নারীর খুব অভাব হওয়ায় পুরূষগুলো আদর্শের পানে না ছুটে ঐ নারীর দিকে খারাপ মনে ধাবিত হচ্ছে। এতে পুরুষ তার পৌরুষদীপ্ততা হারিয়ে লখিন্দরের মত মৃত পুরুষে পরিনত হচ্ছে। নারী তাকে জীবন সঙ্গী করে পরিতৃপ্ত -পরিশান্ত হতে পারছে না, সৃষ্টি হচ্ছে নানাবিধ সমস্যা যার পরিনাম খুবই ভয়াবহ। তাইতো এ যুগের যুগো- পুরুষোত্তম শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র বলেছেন-“দুনিয়ার সামনে এমন সর্বনাশ আসছে যার তুলনায় এই মহাযুদ্ধ লোকক্ষয় সম্পদের ক্ষয় কিছুই নয়।গতিক দেখে মনে হুয় মনুষ্যত্বের মূল বুনিয়াদ লোপ পেয়ে যাওয়া অসম্ভব নয় । তাই দীক্ষা, শিক্ষাও বিয়ে এই তিনটি জিনিস ঠিক করে দেন আপনারা”। একবার একজন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রকে বলেন- জ্ঞান বিজ্ঞানের এত উন্নতির সত্বেও ঘরে-বাইরে বিশ্বের সর্বত্র এত অশান্তি এত মিস আণ্ডারস্ট্যান্ডিং বাড়ছে কেন? ঠাকুর বলেন-‘ আমরা ইষ্ট আদর্শের আণ্ডারে নিজেকে স্ট্যাণ্ড করাই না তাই এত মিসাণ্ডারস্ট্যাণ্ডিং’।কাব্যিক ভাষায় ঠাকুরের সাবলীল উক্তি–

“স্বামীর ঝোঁকে ছুটলে নারী

শ্রেষ্ঠ ছেলের মা,

ইষ্টঝোঁকে ছুটলে পুরুষ

শক্তি নিরুপমা”।

সারাবিশ্বে মনুষ্যত্বের জয়জয়কার হোক। জয়গুরুঅন্তে  – রমেশচন্দ্র বিশ্বাস ।