বিশেষ প্রতিনিধি, মাগুরাবার্তা
মাগুরার শ্রীপুরে সদ্য সরকারি করণকৃত শ্রীপুর সরকারি কলেজ নিয়ে একটি স্বার্থান্বেষী মহল গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিভিন্ন দপ্তরে একের পর এক মিথ্যা অভিযোগ, মামলা দিয়ে  কর্তৃপক্ষকে নাজেহাল করছেন কলেজের সাবেক ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মুহাম্মদ আলীর নেতৃত্বে সাবেক এবং বর্তমান দু’একজন শিক্ষক। সম্প্রতি একাধিক শিক্ষক-কর্মচারি ও অভিভাবকদের লিখিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে অনুসন্ধানে এসবের সাথে জড়িতদের বিষয়ে বিভিন্ন তথ্য জানা গেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কলেজ প্রদত্ত বকেয়া অর্থ দাবি করে কলেজের সাবেক উপাধ্যক্ষ মুহাম্মদ আলী, আবু বকর ও মো: সাইদুর রহমান বাদী হয়ে কলেজের অধ্যক্ষ নির্মল কুমার সাহার নামে আদালতে মামলা করেন। মামলায় কলেজটি যেন জাতীয়করণ না হয় তার আবেদন জানানো হয়। কিন্তু মুহাম্মদ আলী কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব  পালন করা কালীন সময়ে তৎকালীন কলেজ গর্ভর্নিং বডির সিদ্ধান্ত মোতাবেক যেহেতু সরকারি ভাবে শতভাগ বেতন দেওয়া  হতো তাই কলেজের নিজস্ব তহবিল থেকে কোন বকেয়া বেতন দেওয়া হবে না মর্মে সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়। অথচ সেই মুহাম্মদ আলী ষড়যন্ত্র করে কলেজের নামে আদালতে মামলা ঠুকে দেন। এখানেই মুহাম্মদ আলী থেমে থাকেননি। এর পরে ডিজি অফিস, ইউএনও অফিস সহ একাধিক দপ্তরে কলেজ অধ্যক্ষের নামে অভিযোগ দায়ের করতে থাকেন তিনি। এসব অভিযোগে ঘুরে ফিরে একই বিষয় উল্লেখ করা হয়। কলেজ ক্যাম্পাস থেকে গাছ কেটে লক্ষ লক্ষ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ দেওয়া হয়। অথচ সরকারি অর্থায়নে একাডেমিক ভবন নির্মাণের জন্য সেই জায়গায় যেসব গাছ ছিল তা গর্ভনিং বডির সিদ্ধান্ত মোতাবেক রেজুলেশনের মাধ্যমে গাছগুলো কেটে তা দিয়ে কলেজের চেয়ার, টেবিল ও বেঞ্চ তৈরী করা হয়, যা দৃশ্যমান। এরপরে অধ্যক্ষেরে নিয়োগ অবৈধ মর্মে অভিযোগ করা হয়। অথচ সাবেক ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মুহাম্মদ আলীর সময়েই অধ্যক্ষ নিসেবে নিয়োগ পান নির্মল কুমার সাহা । সে সময় কলেজে গর্ভনিং বর্ডির সভাপতি ছিলেন তৎকালীন জাতীয় সংসদ সদস্য প্রফেসর ডা: এম.এস আকবর। নিয়োগ পত্র পবার পরে বিধি মোতাবেক জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পূর্বানুমতি নিয়েই নির্মল কুমার সাহা অধ্যক্ষ হিসেবে যোগদান করেন।
লিখিত একাধিক অভিযোগে জানা যায়, সর্বশেষ গত ৪ আগষ্ট মাগুরা আদালতে একই ধরনের অভিযোগ এনে অধ্যক্ষ যেন আত্তীকৃত না হতে পারেন, সে মর্মে আরেকটি মামলা করা হয়। বর্তমানে মামলাটিও বিচারাধীন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছেন, এসব কর্মকান্ডে মুহাম্মদ আলীর সাথে আছেন কলেজের প্রাক্তন শিক্ষক আবু বকর ও সাইদুর রহমান। এসব কাজে অনেক আগে থেকেই সহযোগিতা করে আসছেন কলেজের বতমানে কর্মরত গণিত বিভাগের শিক্ষক আব্দুল আলিম মিয়া। মুহাম্মদ আলী দীর্ঘদিন ধরে বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িত এবং মগুরা জেলা বি.এনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক। বর্তমানে আওয়ামীলীগের প্রভাবশালী এক নেতার আত্মীয় পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন জায়গায় তদবির করে যাচ্ছেন বলে জানা গেছে।
জানা গেছে, গত ২৫ আগষ্ট মামলার শুনানি ছিল। তাই অধ্যক্ষসহ শিক্ষকদের ছয় সদস্যের একটি টিম সকাল ৯ টার দিকে মাগুরার উদ্দেশ্যে যাত্রা করছিলেন। এমন সময় তারা দেখতে পান গণিত বিভাগের শিক্ষক আব্দুল আলিম মিয়া একটি ফাইল নিয়ে কলেজের প্রধান ফটকের সামনে রানা ফটোস্টেটে কাজ করাচ্ছেন। কয়েকজন শিক্ষক এগিয়ে গিয়ে দেখেন অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে ডিজিতে দায়েরকৃত একটি অভিযোগ সহ, বর্তমান অধ্যক্ষের পূর্বের প্রতিষ্ঠানের ছাড়পত্র, বর্তমান প্রতিষ্ঠানে যোগদান পত্র সহ ১১৯ পৃষ্টার ডকুমেন্ট সেখানে রয়েছে, যা তার কাছে থাকা কোন ভাবেই কাম্য নয়। বিশেষ করে বতর্মান অধ্যক্ষের পূর্ব প্রতিষ্ঠান থেকে ছাড়পত্র, বর্তমান প্রতিষ্ঠানে যোগদান পত্র তার কাছে এলো কীভাবে? এ সময় অধ্যক্ষ কথা বলার জন্য তাকে কলেজ অফিসে আসতে বললে তিনি যাবেন না বলে জানান। সে সময় উপস্থিত শিক্ষকবৃন্দ তার হাতে থাকা ফাইলটি নিয়ে নেন এবং কলেজে চলে আসেন। এর পর-পরই শুরু হয় আবার নাটক ও ষড়যন্ত্র। গত ২৭ আগষ্ট অধ্যক্ষ লোহার রড দিয়ে তার মাথায় ও কানে আঘাত করেছেন ও ফাইল ছিনতাই করেছেন মর্মে অভিযোগ এনে মাগুরা আদালতে একটি ফৌজদারি মামলা দায়ের করা হয়। অথচ ঘটনার সময় উপস্থিত শিক্ষকেরা জানিয়েছেন তার সাথে কোন প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। কলেজে কর্মরত থেকে একজন শিক্ষক কীভাবে এমন মিথ্যা মামলা দায়ের করলেন- এ প্রশ্ন শিক্ষার্থী ও অভিবাবকদের। এ নিয়ে গত ২৭ আগষ্ট কলেজের সকল শিক্ষকদের নিয়ে এক জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় উপস্থিত শিক্ষকেরা ঘটনার জন্য শিক্ষক আব্দুল আলিম মিয়ার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যাবস্থা গ্রহনের জন্য জোর দাবী জানিয়েছেন। তাছাড়া ৩৩ জন শিক্ষকের নাম ও জাল স্বাক্ষর সংবলিত ডিজিতে যে অভিযোগ দেওয়া হয়েছে, তার জন্য তদন্ত কমিটি গঠন ও আইনগত পদক্ষেপ নেওয়ার সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়। উল্লখ্য, যে ৩৩ জন শিক্ষকের নাম ব্যাবহার করা হয়েছে, সেসব শিক্ষকেরা এ বিষয়ে কিছুই জানেন না বলে সভায় সকলকে অবগত করেন। এই জাল-জালিয়াতির জন্য শিক্ষক আলিমের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যাবস্থা গ্রহন করা উচিৎ বলে শিক্ষকেরা মতামত প্রকাশ করেন।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী শ্রীপুর সরকারি কলেজের সিনিয়র শিক্ষক অর্থনীতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আবু জাফর বলেন, কোনভাবেই আব্দুল আলিমের সাথে খারাপ আচরন করা হয়নি। কলেজের বিরোধী কর্মকান্ডে লিপ্ত থাকার প্রত্যক্ষ প্রমান সহ তাকে ধরে ফেলায় তার কাছ থেকে শুধু সেইসব কগজপত্র সহ একটি ফাইল নিয়ে নেওয়া হয়েছে। কলেজের শিক্ষক কাউন্সিলের সম্পাদক আশরাফ হোসেন বলেন, ঘটনার সময় তিনি সেখানে উপস্থিত ছিলেন। কোন প্রকার অপ্রিতিকর ঘটনা সেখানে ঘটেনি। তবে আব্দুল আলিমের কাছে পাওয়া কাগজ-পত্র প্রমাণ করে তিনি কলেজ বিরোধী কর্মকান্ডের সাথে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত,যা অত্যন্ত দু:খ জনক।
এ বিষয়ে মতামত জানতে মুহাম্মদ আলীর মোবাইল নাম্বারে একাধিকবার কল করা হলেও তার সাথে কথা বলা সম্ভব হয়নি।
কলেজের সাবেক গর্ভনিং বর্ডির সদস্য ও শ্রীপুর উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আবুল কালাম আজাদ বলেন, একজন শিক্ষক হয়ে কলেজ বিরোধী কর্মকান্ডে  লিপ্ত থাকা কোনভাবেই কাম্য নয়। একজন শিক্ষক হয়ে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়েয়ের বিষয়ে তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করেন। জাময়াত-বিএনপি জোট করে কলেজের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

এদিকে এ সরকারের অন্যতম সাফল্য শ্রীপুর কলেজ সরকারি করার প্রক্রিয়াকে প্রশ্নবিদ্ধ ও বিলম্বিত করতে একটি মহল এ ধরনের অপপ্রয়াস নিচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন কলেজের একাধিক অভিভাবক।

মাগুরা/ ৩০ আগস্ট  ১৯