বিশেষ প্রতিনিধি, মাগুরাবার্তা
মাগুরায় আনজিরা খাতুন (২২) নামে এক প্রসুতি ও তার নবজাতকের মৃত্যুর অভিযোগ পাওয়া গেছে। অজ্ঞান চিকিৎসক ছাড়াই অপারেশনসহ ত্রুটিপুর্ন চিকিৎসার কারণে এ মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে বলে ঘটনার শিকার আনজিরার পরিবার অভিযোগ করেছে।
নিহত আনজিরা খাতুনের স্বামী আকতার হোসেন জানান, শনিবার দুপুর ৩টায় তার প্রসুতি স্ত্রী আনজিরাকে মাগুরা শহরের হাজি আব্দুল হামিদ সড়কের মা প্রাইভেট হাসপাতালে ভর্তি করেন । সেখানে ভর্তির পর দায়িত্বরত চিকিৎসক আবদুস সালাম অজ্ঞান ডাক্তার ছাড়াই আনজিরার শরীরে অস্ত্রপচার করেন। জন্ম হয় একটি পুত্র সন্তানের। জন্মের পরই শিশুটি অসুস্ত হয়ে পড়লে তার অবস্থা আশঙ্কাজনক জানিয়ে বিকাল ৫টার দিকে মাগুরা ২৫০ শয্যা হাসপাতালে নিয়ে স্থানান্তর করা হয়। সেখানকার চিকিৎসকরা তাকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন। এ অবস্থায় শিশুটিকে ওইদিন রাত ৯টার দিকে ফরিদপুরে নিয়ে যাওয়া হলে কিছুক্ষণ পরই তার মৃত্যু হয়। এ ঘটনার পর রবিবার সকালে পরিবারের পক্ষ থেকে গ্রামের বাড়িতে শিশুটির দাফন করা হয়। অন্যদিকে সকাল ১০টার দিকে মা হাসপাতালে থাকা গৃহবধু আনজিরা  অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে ডাক্তার আব্দুস সালাম ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানোর পরামর্শ দেন। দ্রুত তাকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হলে সেখানে রবিবার বিকালে তার মৃত্যু হয়।
আকতার হোসেন বলেন,‘ অজ্ঞান ডাক্তারের কথা বলে মা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আমার কাছ থেকে টাকা নিয়েছে। অথচ আবদুস সালাম নিজেই অজ্ঞান ডাক্তার সেজে অপারেশন করেছে। এ ঘটনার প্রতিবাদ জানালে আব্দুস সালাম স্থানীয় লোকদের ডেকে জোর করে আমাদের হাসপাতাল থেকে বের করে দিয়েছে।
এ বিষয়ে ডাক্তার আবদুস সালাম অজ্ঞান ডাক্তার ছাড়া রোগির শরীরে অস্ত্রপচারের বিষয়টি স্বীকার করে বলেন,‘ শিশু ও প্রসূতির মৃত্যুর পেছনে আমার কোন গাফিলতি নেই। প্রসূতির হার্টের সমস্যা ছিল। যে কারণে তার মৃত্যু হতে পারে। আর আনজিরার গর্ভেই শিশুটির অবস্থা খারাপ থাকায় তার মৃত্যু হয়েছে।
এ বিষয়ে মাগুরা সিভিল সার্জন প্রদীপ কুমার সাহা বলেন,‘কবে থেকে এই প্রাইভেট হাসপাতালটি চলছে সেটি আমাদের জানা নেই। তবে তারা অনুমোদনের জন্যে সম্প্রতি অনলাইনে তারা আবেদন করেছে বলে জানি। আর অজ্ঞান ডাক্তার ছাড়া অস্ত্রপচার ও মৃত্যুর ঘটনা ঘটে থাকলে সে বিষয়ে অভিযোগ পাওয়া গেলে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে’।
এদিকে মা নামের ওই প্রাইভেট হাসপাতালে গিয়ে দেখে গেছে, প্রয়োজনীয় চিকিৎসা উপকরন ছাড়াই খুবই স্বল্প পরিসরের একটি ভাড়া বাড়িতে এটি এ ধরনের চিকিৎসা কার্যক্রম চালাচ্ছে। এটি নামেই হাসপাতাল। সরকারিভাবে কোন অনুমোদন নেই এ প্রতিষ্ঠানের। এটি মালিক রিপা খাতুন এক সময় শহরের শামিমা ক্লিনিকে নার্স হিসেবে কর্মরত ছিলেন। দুই বছর আগে নিজেই এই প্রাইভেট হাসপাতালটি খুলে বসেছেন। যেখানে একমাত্র চিকিৎসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন মাগুরা সদর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাক্তার আবদুস সালাম। হাসপাতাল মালিখ রিপা খাতুন এ বিষয়ে কোন কথঅ বলতে রাজি হন নি। অন্যদিকে একটি দালাল চক্র নিহত গৃববধু আনজিরার স্বামীকে ঘটনার পরপরই বিষয়টি নিয়ে বাড়াবাড়ি না করতে হুমকী দেবার পাশাপাশি মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে তাকে ম্যানেজ করার চেস্টা করছে এমন অভিযোগ করেছেন অনেকে।

মাগুরা/১৯ আগস্ট ১৯