বিশেষ প্রতিনিধি, মাগুরাবার্তা
মাগুরা সদরের সাইত্রিশ বাজারে রবিবার রাতে চাষিদের নিয়ে সমবায় ভিত্তিক বিজ উৎপাদন ও রপ্তানির জন্য গুদামজাত করে রাখা একটি বীজের গোডাউনে অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় মাগুরা থেকে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা গিয়ে আগুন নিভিয়ে ফেলে। কিন্তু ততক্ষণে গোডাউনের সকল বীজ পুড়ে যায়। এতে ওই গোডাউনে রপ্তানির উদ্দেশ্যে রক্ষিত ১৯৪২জন কৃষকের কমপক্ষে ৫০ কোটি টাকা মূল্যেও মোট ৩০৬ মেট্রিকটন পেঁয়াজ বীজ সম্পূর্ণ পুড়ে যাওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ভিয়েতনাম ও থাইল্যান্ডে রপ্তানির উদ্দেশ্যে রাখা ওই বীজের মূল্য ৫০ কোটি টাকার উপরে বলে দাবী করেন কে এম আই ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি লিমিটেড এর সভাপতি মোঃ কায়েমুজ্জামান।
সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক কাজী মিজানুর রহমান জানান- মাঠ পর্যায়ের কৃষকদের মাঠ সদস্য হিসেবে বিনামূল্যে বীজ ও উৎপাদন খরচ দিয়ে আমেরিকান কিং জাতের এ পেঁয়াজ বীজ উৎপাদন করা হয়। ২০১৬ সাল থেকে কৃষকরা এ প্রক্রিয়ার সাথে জড়িত। গোডাউনে বীজ সংরক্ষণের পর সিজনে বিক্রি করে তাদের পাওনা পরিশোধ করা হয়। এ বছর বীজ সংরক্ষণের পর এ দূর্ঘটনা আমাদের দিশেহারা করে তুলেছে। প্রান্তিক এসব কৃষকরা অনেক আশা করে কিছু লাভের আশায় পেঁয়াজ বীজ চাষ করেছেন। আগস্টের শেষে এ গোডাউনের বীজ ভিয়েতনাম ও থাইল্যান্ডে রপ্তানির প্রক্রিয়া চূড়ান্ত হয়ে গিয়েছিল। এ ঘটনায় প্রায় ২ হাজার কৃষক ও অর্ধশত সমিতির সদস্য পথে বসে গেছেন।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে সদরের আলাইপুর গ্রামের কৃষক তৈয়ব আলী ২লাখ ৪০ হাজার টাকা মূল্যের ১শ ২০ কেজি, মহম্মদপুরের বিনোদপুর গ্রামের কৃষক সাত্তার মোল্যা ৩ লাখ টাকা মূল্যের ১শ ৫০ কেজি, মহম্মদপুরের চর বড়রিয়া গ্রামের কৃষক বাবুল মিয়া ৪ লাখ টাকা মূল্যের ২শ কেজি পেঁয়াজ বীজ এ সমবায় সমিতিতে দিয়েছেন। এভাবে কৃষকদের ৩০৬ মেট্রিকটন বীজ ওই গোডাউনে রক্ষিত ছিল। যার বাজারমূল্য ৫০ কোটি টাকা বলে সংশ্লিষ্ঠরা জানান।  অগ্নিকান্ডের খবর শুনে এলাকাবাসি ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন। ঘটনার পর অনেক কৃষক এখানে ছুটে আসেন। এ পেঁয়াজ বীজের পাওনা টাকা থেকে তারা দেনা মিটিয়ে সংসারের কাজে লাগানোর পরিকল্পনা করেছিলেন। কিন্তু অগ্নিকান্ডে তাদের সব পরিকল্পনা নস্যাত হয়ে গেছে। এসব কৃষক অনেকেই এখন পথে বসে গেছেন বলে জানান। তারা সরকারের কাছে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দাবী করেন।
স্থানীয় হাজরাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কবির হোসেন জানান- এখানে অনেক কৃষকের স্বপ্ন সঞ্চিত ছিল। গোডাউনে আগুন লেগে তাদের সে স্বপ্ন ধুলিস্যাত হয়ে গেছে। তিনি এ কৃষকদের ক্ষতিপূরণ দেয়ার জন্য সরকারের কাছে দাবী জানান।
মাগুরা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (তদন্ত) মোঃ সাইদুর রহমান জানান- ঘটনার পরপর পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে এটি কোন নাশকতার ঘটনা নয় মর্মে নিশ্চিত হয়েছে। এ ব্যাপারে মাগুরা সদর থানায় একটি জিডি এন্ট্রি হয়েছে।
মাগুরা ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন ম্যানেজার মোহাম্মদ সুমন আলী জানান- অগ্নিকান্ডের পরপরই আমরা ঘটনাস্থলে যাই। প্রাথমিকভাবে এটিকে সর্ট সার্কিট বলে মনে করা হচ্ছে। অত্যন্ত দাহ্য বস্তু হওয়ায় অল্প সময়েই পুরো গোডউনে আগুন ছড়িয়ে যায়। কি কারণে এ অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটলো তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।  ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারনের জন্য আমরা তদন্ত করছি । তদন্ত শেষে বিস্তারিত জানা যাবে।

মাগুরা / ১৯ আগস্ট ১৯