রূপক আইচ,মাগুরাবার্তা
মাগুরায় জুলাই’১৯ মাসে ৫টি চাঞ্চল্যকর হত্যাকান্ডসহ বেশকিছু চাঞ্চল্যকর ঘটনার উপযুক্ত সুরাহা না হওয়ায় জেলায় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন সাধারণ মানুষ ও ভূক্তভোগীরা। ঘটনার একমাসের মাথায়ও উদ্ধার হয়নি জুলাই এর প্রথম দিনে নিহত ইমন হোসেনের কাটা মাথা। চাঞ্চল্যকর এসব ঘটনার পর তেমন কোন কুল কিনারা করতে পারেনি পুলিশ।  ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছে গেছে অনেক অভিযুক্ত। উদ্ধার হয়নি হত্যায় ব্যবহৃত অস্ত্র ও অন্যান্য আলামত।  এ অবস্থায় ক্ষোভ বাড়ছে নিহতদের পরিবারগুলিতে। প্রশ্ন উঠছে পুলিশের কর্মকান্ড নিয়ে। তবে জেলা পুলিশের উর্ধতন কর্মকর্তারা দিচ্ছেন দায়সাড়া বক্তব্য। এমনকি এসব ঘটনার পিছনে পাট বড় হওয়ার মত হাস্যকর বক্তব্যও দিচ্ছেন পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
১ জুলাই রাতে হত্যার শিকার হন মাগুরা সদর উপজেলার চাঁদপুর গ্রামের ইসলাম মোল্যার ছেলে মাগুরা পলিটেকনক ইনস্টিটিউটের ছাত্র ইমন হোসেন (২৩)।  পরদিন সকালে মহম্মদপুরের পারুয়ারকুল গ্রামে একটি পাট ক্ষেতের মধ্যে পাওয়া যায় তার মাথাবিহীন মরদেহ।  প্রথমে তাকে অজ্ঞাত হিসেবে  দাফন করা হলেও পরে তার পরিচয় মেলে।  আদালতের মাধ্যমে লাশ ফেরত পেলেও আজ অবধি নিহত যুবকের মাথা ফেরত পায়নি তার পরিবার।
হত্যাকান্ডের পরিদন ২ জুলাই মহম্মদপুর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন নিহতের বাবা ইসলাম মোল্যা।  আসামী করা হয়, সদর উপজেলার সিরিজদিয়া গ্রামের হুমায়ূন ফকির (২৭) ও অনিক ফকিরসহ (২৩) অজ্ঞাত কয়েকজনকে।  প্রথমে মামলাটি তদন্ত করছিল মহম্মদপুর থানা পুলিশ। পরে মামলাটি  জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখা ডিবিতে হস্তান্তর হয়।  তবে ওই মামলায় এখনো কোন আসামীকে আটক করতে পারেনি পুলিশ।
নিহতের বাবা মামলার বাদি ইসলাম বলেন, ‘নিজের জলজ্যান্ড যুবক ছেলের মাথাবিহীন দেহ দাফন করতে হয়েছে।  এ কষ্ট কোনদিন ভোলা যাবে না।    তিন সপ্তাহেও পুলিশ কোন আসামীকে ধরতে পারেনি। তাহলে তারা করে কি? ‘
এ বিষয়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাসির উদ্দিন বলেন, ‘মামলাটিতে এখনও কোন আসামীকে আটক করা যায়নি।  আলামতও উদ্ধার হয়নি।  তবে জোর চেষ্টা চলছে।  আশাকরি শিগগিরি ধরা পড়বে আসামীরা।’
এর পরদিন ২ জুলাই রাতে খুন হয় আল আমিন হোসেন (১৪) নামে আরও এক অটোচালক কিশোর। ৩ জুলাই সকালে সদর উপজেলার কুকিলা গ্রামের পাট ক্ষেত থেকে ওই কিশোরের গলাকাটা মরদেহ উদ্ধার করা হয়।  এর একদিন পরই অবশ্য হত্যায় জড়িত তিনজনকে আটক করে পুলিশ।  উদ্ধার হয় হত্যায় ব্যবহৃত ছুরি।  পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আটক হওয়ারা জানান, ইজিবাইক চুরি করতে খুন করা হয় আল আমিনকে।
পরপর দুটি হত্যার রেশ কাটতে না কাটতেই ৭ জুলাই দুপুরে শহরের শিবরামপুর এলাকায় প্রকাশ্যে ছুরিকাঘাতে  হত্যা করা হয় মাগুরা সরকারি হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ ছাত্র লিসানুর রহমান ওরফে লিসানকে (১৭)।  পরদিন সদর থানায় হত্যা মামলা করেন নিহতের বাবা রফিকুল ইসলাম।  মামলার এজাহারে নিজনান্দুয়ালী গ্রামের শামিমকে (১৯) পরিকল্পনারী ও শিবরামপুর গ্রামের সোহেল (২৪) নামে এক যুবককে সরাসরি হত্যাকারী হিসেবে উল্লেখ করা হয়।  এছাড়া, হত্যায় সংশ্লিষ্ঠতার অভিযোগ আনা হয় আরও চার জনের বিরুদ্ধে।  এরমধ্যে ঐদিনই রবিন (২০) ও হাসান (১৮) নামে নিজনান্দুয়ালী গ্রামের দুই যুবককে আটক করে পুলিশ।  এজাহারভুক্ত আটক দুই আসামী এখন কারাগারে রয়েছেন। আটক করা যায়নি হত্যাকারি সোহেলকে।  উদ্ধার করা যায়নি হত্যায় ব্যবহৃত ছুরি। গত ২২ জুলাই আসামী শামীম ও রিংকু আত্মসমর্পন করে।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সদর থানার উপ পরিদর্শক (এসআই) আলমগীর হোসেন জানান, আটককৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তবে মুল আসামী সোহেলকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
এ বিষয়ে নিহত লিসানের বাবা রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘পুলিশ কতটা তৎপর তা তারাই ভালো জানে। তবে আমার ছেলের খুনি এখনও গ্রেফতার হয়নি। আমরা অনিশ্চয়তার মধ্যে আছি।  এদিকে গত ২২জুলাই সোমবার স্ত্রী পূর্ণ  ও ১০ মাস বয়সি শিশু সন্তান মানবকে গলাকেটে হত্যাকরে নিজে গলায় ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে আত্মহত্যার চেষ্টা চালায় শহরের  পারনান্দুয়ালী মিস্ত্রীপাড়া এলাকায় বিশ্বজিত মজুমদার (৩০)। ওই ঘটনারও তোমন কোন সুরাহা করতে পারেনি পুলিশ। আহত বিশ্বজিৎ বর্তমানে ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসাধীন রয়েছে।
এক মাসের মধ্যে ৫টি হত্যাকান্ড উদ্বেগ বেড়েছে সাধারণ নাগরিকদের মধ্যে।  তারা বলছেন হত্যাকান্ডগুলির অগ্রগতি তেমন দৃশ্যমান নয়। পুলিশ তাৎক্ষণিকভাবে  শিগগিরি জড়িতদের গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় আনা না গেলে অপরাধ প্রবণতা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা তাদের।
অবশ্য নাগরিদের উদ্বিগ্ন না হওয়ার পরামর্শ দিয়ে মাগুরার পুলিশ সুপার খান মুহাম্মদ রেজোয়ান বলেন,  ‘প্রত্যেকটি ঘটনা যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে।  জেলার আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে বিশেষ অভিযানের পাশাপাশি নাগরিদের মধ্যে  সচেতনতামূলক কর্মসুচি পরিচালনা করা হচ্ছে। তবে জেলায় এ সময়টিতে পাট ক্ষেতে পাট বড় হয়ে যাওয়ায় অপরাধ কর্মকান্ড বেড়ে গেছে বলে দাবী পুলিশ সুপারের।’

মাগুরা / ৩১ জুলাই ১৯