বিশেষ প্রতিনিধি, মাগুরাবার্তা
মাগুরার বহুল আলোচিত মায়ের পেটে গুলিবিদ্ধ শিশু সুরাইয়ার ৪র্থ জন্মদিন আজ। ২০১৫ সালের ২৩ জুলাই  মায়ের পেটে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারাত্মক আহত অবস্থায় মাগুরা সদর হাসপাতালে অস্ত্রপচারের মাধ্যমে জন্ম হয় সুরাইয়ার। আজ ৪ থেকে ৫ বছরে পা দিচ্ছে সেই সুরাইয়া। কিন্তু প্রিয় সন্তানের জন্মদিনে বাড়িতে এখন আর আনন্দ উৎসব হয়না। জন্মদিনে মায়ের চোখে এখন শুধুই হতাশা। বাবার কপালে  চিন্তার ছাপ। বয়স ৪ থেকে পাঁচে পড়লেও সুরাইয়া এখনও হাটতে শেখেনি। সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারেনা সে। হামাগুড়ি দিয়ে চলতে হয় তাকে। বাম চোখটা অন্ধ হয়ে গেছে আগেই। ডান চোখেও কম দেখতে পায় সে।Magura Suria Pic 2
সুরাইয়ার বাবা বাচ্চু ভুইয়া জানান-  ২০১৫ সালের ২৩ জুলাই দুপুরে মাগুরা শহররের দোয়ারপাড় এলাকায় দুদল এলাকাবাসির সংঘর্ষের সময় দুদলের গোলাগুলির মধ্যে পড়ে তল পেটে গুলিবিদ্ধ হয় তার স্ত্রী নাজমা বেগম। এ সময় পেটের মধ্যেই মারাত্মক আহত হয় সুরাইয়া। ওই রাতেই অপারেশনের মাধ্যমে জন্মহয় গুলিবিদ্ধ সুরাইয়ার। পরে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে দীর্ঘদিন চিকিৎসার পর সুরাইয়াকে নিয়ে বাড়ি ফেরে তার পরিবার। সুরাইয়া ঢাকায় চিকিৎসাধীন থাকার সময় তার চিকিৎসাসহ সামগ্রীক ব্যয়ভার বহনের ঘোষনা দেন তৎকালীন স্বাস্থ্যমন্ত্রী আওয়ামীলীগের ডাকসাইটে নেতা মোঃ নাসিম। মিডিয়ায় তিনি সুরাইয়ার সকল খরচ বহনের ঘোষনা দেন। কিন্তু  সে সময় সামান্য কিছু অর্থ সহায়তা পেলেও পরবর্তীতে আর কেউ খোঁজ নেয়নি সুরাইয়া ও তার পরিবারের। বর্তমানে সুরাইয়াকে নিয়ে তিনি গভীর দুশ্চিন্তার মধ্যে রয়েছেন। তার চিকিৎসার জন্য অনেক অর্থ প্রয়োজন। কিন্তু সামন্য দোকান থেকে যা আয় হয় তাতে সংসারই চলে না। টাকার অভাবে বাচ্চাটিকে উন্নত চিকিৎসা দেয়া সম্ভব হচ্ছে না।
সুরাইয়ার মা নামজা বেগম অভিযোগ করেন- ঘটনার পর দেশ বিদেশের মিডিয়ায় ঘটনাটিকে ফলাও করে প্রচার করার ফলে তাৎক্ষনিকভাবে সরকারের লোকজন বারবার তাদের কাছে এসেছেন। কিন্তু শিশুটির দীর্ঘমেয়াদী চিকিৎসার ব্যবস্থা কেউ নেননি। অন্যদিকে এ ঘটনায় দায়ের করা মামলার সব আসামী জামিনে মুক্ত থাকায় মামলাটি ধীরগতিতে চলছে। মামলাটি চালাতে গিয়েও তারা উকিলের ফি দিতে দিতে আরও বেশী অর্থনৈতিক সংকটে পড়ছেন।
এ ব্যাপারে মাগুরা সদর হাসপাতালের সার্জারী বিশেষজ্ঞ  ডা. শফিউর রহমান জানান- শিশু সুরাইয়ার চিকিৎসা মাগুরায় চলছে। কিন্তু তার যে মানের চিকিৎসা দরকার সে মানের চিকিৎসা মাগুরায় দেয়া সম্ভব না। সে কারণে তাকে দ্রুত ঢাকায় নিয়ে উন্নত চিকিৎসা দিলে সে হয়তো হাটতে শিখতে পারে।
উল্লেখ্য, ২০১৫ সালে ২৩ জুলাই মাগুরা শহরের দোয়ারপাড় এলাকায় স্থানীয় দুপক্ষের সংঘর্ষে মাতৃগর্ভে গুলিবিদ্ধ হয় সুরাইয়া। জরুরী অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে তাকে মায়ের গর্ভ থেকে বের করেন ডাঃ শফিউর রহমান। এ সময় আবদুল মমিন নামে এক ব্যক্তি গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। ভাগ্যচক্রে বেঁচে যায় গর্ভের ভেতরে গুলিবিদ্ধ শিশু সুরাইয়া ও তার মা নাজমা বেগম।

রূপক/মাগুরা /২২ জুলাই ১৯