বিশেষ প্রতিনিধি, মাগুরাবার্তা
‘সাংবাদিকদের কোন কমন সেন্সই নেই। এরা লেখাপড়া শিখে সাংবাদিক হইছেন নাকি মাঠ, ঘাট থেকে উঠে এসে সাংবাদিকতা করতিছে? কোন কিছু শুনলেই মনে করে মওকা পায়ে গিছি। এবার রাষ্ট্র স্বাধীন করে ফেলবো। সংবাদপত্র দেখে স্বাস্থ বিভাগের ডিজি সাহেব খুবই অবজ্ঞা করেন। উনি বলেন, সংবাদপত্রের কোন নিউজই সঠিক নয়। সাংবাদিকদের সম্পর্কে ডিজি সাহেবেরে ধরণা খুবই খারাপ। ডিজি সাহেবের সাথে  আমার প্রায়ই কথা হয়। উনি বলেন, সাংবাদিকদের কোন কথা শুনবেন না। আপনার দায়িত্ব আপনি পালন করেন।’ সাংবাদিক ও সংবাদপত্র সম্পর্কে  এমন মন্তব্য করেছেন, মাগুরা সদর হাসপাতাল থেকে সম্প্রতি অবসরে যাওয়া আবাসিক মেডিকেল অফিসার ও বিতর্কিত পলি ক্লিনিকের মালিক   ডা. মুক্তাদির রহমান। গত ১৪  জানুয়ারি নিজে উপস্থিত না থেকে নার্সদের দিয়ে তার মালিকানাধীন পলি ক্লিনিকে মাগুরা সদরের আবালপুর গ্রামের অব্দুর রাজ্জাকের স্ত্রী তনু বেগম (৩৮) এর জরায়ু টিউমার অপারেশন করাতে যান। নার্সরা ওই নারীর পেট কেটে জরায়ু ও টিউমারে অতিরিক্ত চর্বি দেখতে পেয়ে ভয়ে ডাক্তার মুক্তাদিকে ফোন করন। মুক্তাদির গিয়ে রোগির অবস্থা খরাপ দেখে পেটে শেলাই দিয়ে দ্রুত ফরিদপুর ডায়াবেটিক হাসপাতালে রেফার করেন। ডায়াবেটিক হাসাপাতাল হয়ে বর্তমানে ওই নারী ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছেন। ওই রোগির স্বামী আব্দুর রাজ্জাকের অভিযোগের বিষয়ে মোবাইল ফোনে স্থানীয় এক সাংবাদিক বিনয়ের সাথে তার বক্তব্য জানতে চাইলে ডাক্তার মুক্তাদির দেশের সাংবাদিক ও সংবাদপত্র সম্পর্কে এ ধরনের মন্তব্য করেন।

ভুক্তভোগি আব্দুর রাজ্জাক সিভিল সার্জন বরাবরে লিখিত অভিযোগে জানান, তিনি ১৪ জানুয়ারি তার স্ত্রীর জরায়ুর সমস্যা নিয়ে ডাক্তার মুক্তাদুর রহমানের কাছে পরামর্শ নিতে আসেন। ডাক্তার মুক্তাদির বলেন, রোগীর অবস্থা গুরুত্বর কিন্তু কোন সমস্যা নেই গাইনী বিশেষজ্ঞ ও সার্জন দিয়ে কালই অপরেশন করে রোগী সুস্থ করে দেবেন। পরদিন তার পলি ক্লিনিকে নিজে উপস্থিত না থেকে ওটিতে  ২জন  নার্সকে দিয়ে  তার স্ত্রীর পেট কেটে জরায়ুর টিউমার অপারেশনের চেষ্টা করেন। কিন্তু রোগির জরায়ু ও টিউমারে অতিরিক্ত চর্বি থাকায় নার্সরা ঘাবড়ে গিয়ে ডাক্তার মুক্তাদুরকে ফোন দেন। তিনি মিনিট ১৫ পরে এসে রোগির অবস্থা খারাপ দেখে নার্সদের পেট সেলাই দিতে বলেন। ওটি থেকে বেরিয়ে ডা.মুকাতাদির তাকে বলেন, রোগির অবস্থা ভাল না। দ্রুত ফরিদপুর ডায়াবেটিক হাসপাতালে নিয়ে যান, সেখানে পরিচিত ডাক্তার আছেণ তারা ব্যাবস্থা নেবেন  বলে, তিনি ক্লিনিক ত্যাগ করেন। বাধ্য হয়ে আব্দুর রাজ্জাক  তার স্ত্রীকে ফরিদপুর ডায়াবেটিক  হা্‌সপাতালে নিয়ে গেলে তারা সেখানে থেকে ফিরিয়ে দেন। পরে স্ত্রীকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন। বর্তমানে আশংকাজনক অবস্থায় তনু সেখানে চিকিৎসাধীন রয়েছে এবং সেখানে পলি ক্লিনিকে চিকিৎসা নিয়ে ভোগান্তির শিকার অন্য আরও এক রোগীকে দেখতে পেয়েছেন বলে জানিয়ে আব্দুর রাজ্জাক বলেন, তিনি এর উপর্যুক্ত বিচার চান।

মাগুরা শহরের খান পাড়ার বাসিন্দা মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ডের জেলা যুগ্ম সম্পাদক ঠিকাদার সেলিম খান অভিযোগ করেন, অতি সম্প্রতি ডা. মুক্তদির মাগুরা সদর হাসপাতাল থেকে অবসরে গিয়েছেন। তবে ৩০ বছরের বেশি সময় ধরে সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক হয়েও তিনি মাগুরা শহরে ক্লিনিক ব্যবসা করে আসছেন। মাগুরা শহরের পলি ক্লিনিকের মালিক মুক্তদির রহমানের বিরুদ্ধে দীর্ঘ দিনের অভিযোগ নিজে ও দালালদের মাধ্যমে সরকারি হাসপাতালে রোগী ভাগিয়ে তার ক্লিনিকে নিয়ে অপারেশ করে চলেছেন। সার্জন না হয়েও সাধারণ মেডিকেল অফিসার হিসেবে অপারেশন করতে গিয়ে এ পর্যন্তু তার হাতে অসংখ্য মানুষের মৃত্যুর ঘটনা  ঘটেছে, তার এ ক্লিনিকের বিরুদ্ধে প্রায়ই নানা অনিয়ম, হয়রানির একাধিক অভিযোগ উঠে থাকে, শুধু তাই নয়, সদর হাসপাতালে আরএমও’র দায়িত্ব পালনকালে তার বিরুদ্ধে ব্যাপক সার্টিফিকেট বানিজ্যর অভিযোগ রয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের সময়ের ইসলামী ছাত্র সংঘের সদস্য ডা. মুক্তাদির ও তার পরিবার যুদ্ধকালিন সময়ে সরাসরি স্বাধীনতা বিরোধি শক্তির পক্ষে সক্রিয় অবস্থান নিয়েছিলেন। সে সময়ে স্কুল জীবনেই ডা. মুক্তাদির বিভিন্ন হিন্দু পরিবারের উপর অত্যাচার চালিয়েছেন। তার নানা অনৈতিক কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের কাছে একাধিকবার বিচার চেয়েছি। কিন্তু’ কোন ফল পায়নি। বরং দিনে-দিনে ডাক্তার মুক্তাদির আরো বেপরোয়া হয়ে ওঠেছেন বলে জানান তিনি।

সার্বিক অভিযোগের বিষয়ে ডাক্তার মুক্তাদিরে বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি বলেন, সাংবাদিকদের সম্পর্কে তিনি ও ডিজি সাহেবের যে কথা  যা বলেছেন  তা সবই সত্যি। সাংবাদিকরা ভাল না এটাই সত্যি। সাংবাদিকরা ভালো হলে সরকার কি ডিজিটাল আইন করতো? সাংবাদিকদের সায়েস্তা করতেই সরকার এই আইন করেছে। সরকারেই তো সাংবাদিকদের উপর আস্থা নেই। নিউজ করে যা পারেন করেন-গে।

সার্জন না হয়েও শুধু মেডিকেল  অফিসার হয়ে কেন অপারেশন করেন ? জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি অহংকার করে বলছি, ‘আমার মত সার্জন ফরিদপুর মেডিকেল কলেজেও একজন নেই’।

এ বিষয়ে মাগুরার সিভিল সার্জন ডা মুন্সি মোঃ ছাদুল্লার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, মাগুরা স্বাস্থ বিভাগের সাথে স্থানীয় সাংবাদিকদের সম্পর্ক অত্যন্ত চমৎকার। তবে কোন চিকিৎসক যদি সাংবাদিকদের সাথে খারাপ আচারণ করেন সেটা দুঃখজনক। তবে, ডিজি স্যারের নাম ব্যাবহার করে তিনি যে মন্তব্য করেছেন, সেটি উর্ধ্বতন মহলে জানানো হবে।