মাগুরাবার্তাটোয়েন্টিফোর.কম
কথায় বলে যার বিয়ে তার খবর নাই , পাড়া পরশির ঘুম নাই। কোথাও সাকিব বলেন নাই তিনি নির্বাচন করবেন। বলেছেন বাংলাদেশ সরকারের পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামাল। পরে তিনি প্রথম আলো অনলাইনের কাছে (২৯ মে) ‍বিকালে বিষয়টি অস্বীকারও করেন। বলেন আমি মনোনয়ন দেওয়ার কে ? তাইলে ভাই সাকিবের দোষটা কোথায় ?

বাংলাদেশ টেস্ট ও টি-টোয়েন্টি দলের অধিনায়ক সাকিব আল হাসান মাগুরা তথা দেশের গর্ব। আন্তর্জাতিক ক্রীড়া ব্যক্তিত্ব। জাতীয় দলের পাশাপাশি বিশ্বের দামি দামি প্রায় সব ফ্রাঞ্চাইজি ক্রিকেট লীগে খেলেন তিনি। দেশের প্রতিনিধিত্ব করেন। আইসিসি র‌্যাঙ্কিংয়ে সাকিব বারবার বিশ্বসেরা ক্রিকেটার হইছেন সবার জানা।

মঙ্গলবার একনেকের সভা শেষে সাংবাদিকদের মোস্তাফা কামাল বলেন, ‘নড়াইল থেকে নির্বাচন করবে মাশরাফি। সাকিবও নির্বাচন করবে।’মাসরাফিকে নিয়ে কোন সমস্যা নাই। সমস্যা সাকিবকে নিয়ে। সবার আগে মাগুরায় ঝড় উঠল। শুরু হলো তার মণ্ডুপাত। সাকিবের বাবাকে বিএনপি-জামাত বানাইতেও কেউ কেউ এক কাঠি এগিয়ে। তার সাথে পাবলিক রিলেসন্স নাই ইত্যাদি ইত্যাদি। রাজনীতির দায়িত্বশীলেরা কাণ্ডজ্ঞানহীন ভাষায় মিডিয়ার কাছে বক্তব্য দিয়ে তাকে ধুয়ে দিলেন।

মোস্তাফা কামাল বলেন, ‘নড়াইল থেকে নির্বাচন করবে মাশরাফি। সাকিবও নির্বাচন করবে।’। প্রশ্ন হচ্ছে মোস্তফা কামাল কী দলীয় মনোনয়ন দেওয়ার মালিক। আরে ভাই দল করেন, অনেকে জানেনই না দলীয় মনোনয়ন কে দেয় ? মনোনয়ন দেয় পার্লামেন্টারি বোর্ড। এই বোর্ডের প্রধান আওয়ামীলীগ প্রধান ও সরকার প্রধান শেখ হাসিনা। উনার ইচ্ছা-অনিচ্ছাই শেষ কখা। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কী বলেছেন সাকিবকে মাগুরা ১ থেকে মনোনয়ন দেওয়া হলো ? তাহলে সাকিব ভোট পাবে না, জামানত বাজেয়াপাত হবে-এসব বলা অবান্তর। নৌকার মতো মার্কা আপনারে আমারে দিলেও ভোট পাবেন। জয়লাভ করবেন। মাগুরা-১ এর বর্তমান সাংসদকে আগে কয়জন চিনত ? মনোনয়ন পায়ে সে এমপি হয় নাই ?

কেউ বলছেন সে পাবলিকের কাছে যায় না। কথা কয় না। সে কী আপনার আমার মতো আম পাবলিক ? আপনার সাথে কাচের গুলি খেলবে। সেলিব্রেটি। সে ইচ্ছা করলেই চৌরঙ্গীর মোড়ে বসে আড্ডা দিতে পারে না। যারে তারে ছবি সাক্ষাৎকার দিতে পারে না। তাকে নিরাপত্তাসহ অনেক কিছু ভাবতে হয়। তাকে গণমাধ্যমে কথা বলতে হলে ক্রিকেট বোর্ডের পারমিশন নিতে হয়।

ভারতের দিকে তাকান। সেখানে রাতারাতি বড় দুই দলের মনোনয়ন পেয়ে গায়ক-নায়ক শিল্পী এমপি মন্ত্রী বনে যাচ্ছেন। তারা কী রাজনীতি করে এমপি হইছে ? কোন সমস্যাতো নাই। কয়েক ডজনের নাম বলতে পারি। দল তার পলিসি ও আকর্ষণ বাড়াতে কিছু বিভিন্ন জগতের সেলিব্রেটিকে মনোনয়ন দিতেই পারেন।

আমরা দেখেছি সাকিবকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী স্পেশালি স্নেহ করেন ভালো বাসেন। কয়দিন আগেও পুরা পরিবার নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে সময় কাটাইছে। আথিথিয়তা গ্রহণ করছেন। সাকিবের মেয়ের সাথে প্রধানমন্ত্রী সবুজ লনে খেলাধুলা করছেন। আর কেউ তা পারছে ? স্বপরিবারে রাষ্ট্রপতি বাসভবনে ডেকে নিয়ে সাকিবকে ইফতার খাওয়াইছে। এসব মনোনয়ন পাওয়ার যোগ্যতা বলছি না। সাকিব যদি আবদার করেই বসেন। আর সাকিবকে যদি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মনোনয়নয় দিয়েই দেন আপনি আমি রাত-দিন চিল্লায়ে কিছুই করতে পারব ?

শেষ কথা সাকিবের কিছু হলেই গালিটা মাগুরা থেকেই শুরু হয়। কেন ? কুমিল্লার লোক কিন্তু গালি দেয় না । আমরা মাগরোর মানুষ কী আনসোস্যাল ? আমরা কী আপন পর বুঝি না ? আপন ভালো নাকি পাগোলোও বুঝে। অথচ মাগরোর রোক বোঝে না। আফসোস ! আমাগের পোলারে যদি আমরা ঘাপাই তালি ইজ্জত কার যায় ? মাগুরা জেলা দেশের বহু উপজেলার চেয়ে সব কিছুতে পেছনে। এক সাকিবের জন্য মাগুরা আজ সবার উপরে। একনেকে কোটি কোটি টাকা খরচ করে উন্নয়ন করতে পারবেন। দেশ সোনা দিয়ে বান্দাইতে পারবেন। পারলে আরেকটা সাকিব বানায় দেনতো।

শাকিবরে না বুঝে গালি দিয়েন না। তাকে সম্মান করুন। না বুঝে আবালের মতো মন্তব্য করেন না। সাকিব আল হাসান বিশ্বসেরা ক্রিকেটার । তাকে ক্রিকেটার হয়ে থাকতে দিন। সে রাজনীতি করবে কিনা মনোনয়ন পাবেন কিনা সে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য অনেক বড় বড় মাথা আছে । মনে রাখবেন বাংলাদেশে মাঠে রাজনীতি করা আর সাংসদ হওয়া এক জিনিস নয়। রাজনীতি করে কয়জন সাংসদ হইছে ? আপনি ১০০ বছর রাজনীতি করে ইউপি মেম্বর হইতে পারবেন না। আবার রাজনীতে না করে এমপি হবেন। ৫০টা নাম বলতে পারি। আপনিও পারেন। এটাই বাস্তবতা !

পৃথিবী সাকিব আল হাসান কে শ্রদ্ধা করে। আসুন আমরাও করি। স্যালুট সাকিব আল হাসান। জয়তু সাকিব আল হাসান।

লেখক: মো. আনোয়ার হোসেন শাহীন। শিক্ষক ও সংবাদকর্মী , মহম্মদপুর ,মাগুরা। ৩০ মে ২০১৮ খ্রি.