বিশেষ প্রতিনিধি, মাগুরাবার্তাটোয়েন্টিফোর.কম
মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলার ত্রাণ ও পুনর্বাসন অফিস এ চলছে দুলাভাই আর ভগ্নিপতির তুঘলকি কান্ড। দীর্ঘ বছর ধরে এ অবস্থা চললেও দেখার যেন কেউ নেই।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে- এ অফিসের লোগো সম্বলিত মোটরসাইকেল নিয়ে নিয়মিত অফিস ও ফিল্ড ওয়ার্ক করছেন এখানকার মতিয়ার মোল্যা। অফিস ফাইল নিয়ে ব্যাস্ত আবজাল মোল্যা ও আজিজার মিয়া। অথচ খোঁজ নিয়ে জানা গেল এরা কেউই অফিসের নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মচারি নন! অথচ তারাই চালাচ্ছেন অফিসের অধিকাংশ কর্মকান্ড। জানা গেছে মতিয়ার ওই অফিসের অফিস সহকারি মকবুল হোসেনের ফুফাত ভাই ও আবজাল মকবুলের দুলাভাই। আজিজার মোল্যা নামে অপর একজন মকবুলের বড় ভাই পরিচয় দিয়ে এ অফিসে দিনরাত অবস্থান করেন। বছরের পর বছর এ অবস্থা চললেও দেখার যেন কেউ নেই।

     উপজেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন অফিস পরিচালিত ৪০ দিনের কর্মসূচী, টিআর, কাবিখাসহ সকল প্রকল্পের এসেসমেন্ট, বিল ভাউচার, থেকে শুরু করে সকল মাস্টাররোল তৈরী করেন তারাই।কাগজে কলমে কোন নিয়োগ না থাকলেও অফিসের লাখ টাকা মূল্যের গাড়ি চালিয়ে চলেন বেড়ান মতিয়ার মোল্যা। তার বাড়িতেই অফিসের একটি মটর সাইকেল থাকে বলে খবর পাওয়া গেছে। আর এসবই তারা করছেন তাদের আত্মিয় ওই অফিসের অফিস সহকারি মকবুল হোসেন এর সহযোগিতায়।

     অভিযোগ আছে ওই অফিসের কাজ করতে তারা কোন পারিশ্র্রমিক না পেলেও রীতিমত রাজার হালে চলছে তাদের জীবন যাপন। অফিস থেকে কোন বেতন ভাতা না পেলেও আবজাল হোসেন এ বছর হজ্বে যাওয়ারও তোড়জোর শরু করেছেন। জানা গেছে বিভিন্ন প্রোজেক্ট সাইডে গিয়ে মতিয়ার নিজেকে কোথাও অফিস সহকারি, কখনও সাব এসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে পরিচয় দেয় । এ সময় সে সংশ্লিষ্ঠদের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা আদায় করে। অফিসে তাকে সহায়তা করে আবজাল ও আজিজার। মুলত এতেই চলে তাদের সংসার। এছাড়া বিভিন্ন প্রকল্প থেকে নামে বেনামে বরাদ্দ করাতে ওস্তাদ তারা। উপজেলা প্রশাসনের ত্রাণ শাখার নাম লেখা মোটর সাইকেলই (হিরো হাঙ্ক) তার অন্যতম পরিচিতি হিসেবে কাজ করে।

     উপজেলার দীঘা ইউনিয়নের বাসিন্দা মমিনুল ইসলাম, রাজাপুর এর তাপস সরকারসহ একাধিক ব্যক্তি জানান- সম্প্রতি মতিয়ার রহমান উপজেলার দীঘা ইউনিয়ন ও রাজাপুর ইউনিয়নের মোট ৩ কিলোমিটার এলাকা হেরিং বোন্ড এর জন্য ১ কোটি ১০লাখ টাকা বরাদ্দ এসেছে। মাঠ পর্যায়ে যার এসেসমেন্ট করেছে মতিয়ার মোল্যা। অফিসের মোটরসাইকেল নিয়ে এসব কাজ তদারকির নামে মতিয়ার কনট্রাকটরদের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা আদায় করেন বলে অভিযোগ করেন তিনি। একাজে তাকে সহায়তা করেন ওই অফিসের অফিস সহকারি মো: মকবুল হোসেন।

     এ বিষয়ে জানতে মহম্মদপুরের পিআইও (প্রোজেক্ট ইমপ্লিমেন্টেশন অফিসার) মিরাজ হোসেন খানের কাছে জানতে চাইলে  তিনি বাইর থেকে লোক এসে কাজ করার কথা স্বীকার করে জানান- দীর্ঘ বছর ধরে এ অফিসে মতিয়ার, আবজাল ও আজিজার কাজ করে অাসেছেন । এদের খরচ বাবদ তিনিসহ অফিসাররা নিজ নিজ বেতন থেকে টাকা দেন বলে তিনি জানান। তিনি অনুযোগ করেন- অফিসে একজন এমএলএসএস ও একজন অফিস সহায়ক আউটসোর্সিং এর মাধ্যমে নিয়োগ দেয়া হলেও তারা ঠিকমত কাজ না করায় বাইরের লোকদের বাদ দেয়া যাচ্ছে না।

     এ ব্যাপারে মহম্মদপুরের ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও মাগুরা সদরের ইউএনও আবু সুফিয়ান জানান- কোন নিয়োগ ছাড়া আইনগতভাবে এ ধরনের কাজ করার কোন এক্তিয়ার কারও নেই। বিষয়টি আমি খতিয়ে দেখবো।

রূপক/মাগুরা/ ১ ফেব্রুয়ারী ১৮