রূপক আইচ, মাগুরাবার্তাটোয়েন্টিফোর.কম
পুনর্বাসিত ভিক্ষুকসহ সমাজের সকল স্তরের মানুষকে সাথে নিয়ে মাগুরায় রবিবার(১১ জুন) সন্ধ্যায় সম্পন্ন হল জেলা প্রশাসনের দোয়া ও ইফতার মাহফিল।
জেলা প্রশাসনের ইফতারে কয়েকজন ভিক্ষুক বা অসহায় গরীব মানুষ থাকবেন এটা স্বাভাবিক। তবে যে বিষয়টি ব্যতিক্রমী মনে হয়েছে তা হলো পুনর্বাসিত ভিক্ষুকদের অত্যন্ত সম্মানের সাথে ইফতার মাহফিলে অংশগ্রহণ করানো। সমাজের বিভিন্ন স্তরের গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সাথে এসব মানুষকে সমান মর্যাদা দিয়ে ইফতারে অংশ গ্রহণ করানো হয়েছে। এতে তাদের পুনর্বাসনে জেলা প্রশাসন যে আন্তরিক তা বোঝা যায়।
এসব ভিক্ষুকদের নিজ নিজ স্থানীয় চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে  সুনির্দিষ্ট টেবিলে বসতে দেয়া হয়েছে। তাদের সামনে দেয়া হয়েছে সুদৃশ্য টেবিলে র‌্যাপিং করা প্লেটে উৎকৃষ্ট মানের ইফতার সামগ্রী। যেটি হয়তো তাদের জন্য অনেকটাই স্বাভাবিক নয়। কিন্তু এতে যে তারা অনুপ্রাণিত হয়েছেন তা তাদের সঙ্গে কথা বলেই বোঝা গেল।

সদরের সংকোচখালী গ্রামের পুনর্বাসিত ভিক্ষুক আয়শা বেগম ও রোকেয়া সুলতানা, নওয়াপাড়া গ্রামের হবিবর রহমান ও মমিনুল ইসলামসহ একাধিক পুনর্বাসিত ভিক্ষুক জানান- এখানে সবার মাঝে তাদের যে সম্মান দেয়া হয়েছে তাতে তারা অত্যন্ত খুশি। তারা আর ভিক্ষাবৃত্তি করতে চান না। সমাজে তাদের কোন সম্মান ছিল না। কোন বাড়িতে তাদের ইফতারের জন্যে ডাকা হলেও বাড়ির বাইরে এক কোনেই তাদের যায়গা হতো।  ডিসি সাহেবের এ ইফতারে এসে তারা বুঝতে পারলেন তাদেরও সম্মান আছে।  তারা আর ভিক্ষা করতে চান না। ভিক্ষাবৃত্তির  ঘৃণিত পেশায় তারা আর ফিরে যেতে চান না। তারা নিজ নিজ সামর্থ অনুযায়ী কাজ করে খেতে চান। এ জন্য তারা প্রশাসনের সার্বিক সহযোগিতা অব্যহত থাকার আশা করেন।

সদরের হাজরাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কবির হোসেন জানান- প্রতিটি ইউনিয়নে হাতে গোনা কয়েকজন মানুষই ভিক্ষাবৃত্তি করেন। এসব মানুষকে ঘৃনিত ওই পেশা থেকে সম্মানের জায়গায় ফিরিয়ে আনতে তারা নিজ নিজ এলাকায় কাজ করছেন। জেলা প্রশাসনের এই ইফতার মাহফিলে তাদেরকে আরো সম্মান জানানো হয়েছে। এতে এ মানুষগুলো সম্মানিত বোধ করছেন।1 Magura bager Ifter

এ প্রসঙ্গে মাগুরার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) আজমল হক জানান- আত্মসম্মনবোধ না বাড়ালে ভিক্ষুকদের পুনর্বাসন সম্ভব না।  তাদেরকে  আত্ম সম্মান, আত্মমর্যাদা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে মানসিক দিক দিয়ে শক্তিশালী করাও পুনর্বাসনের একটি অন্যতম কাজ। সেইসঙ্গে সরকারের বিভিন্ন সোস্যাল সেফটি নেটের আওতায় এনে তাদের পুনর্বাসন করা হচ্ছে। জেলা প্রশাসনের এই ইফতার মাহফিলে তাদের সঙ্গে জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দসহ সকল স্তরের মানুষের সাথে তারা একসঙ্গে ইফতার করেছেন। এতে তাদের আত্মবিশ্বাস বাড়বে বলে আমরা মনে করি।  এভাবেই সমাজের সকল স্তরের সম্মানের সাথে পুনর্বাসনের মাধ্যমেই তাদেরকে সমাজের মূল স্রোতে ফিরিয়ে আনা হবে।

মাগুরা/ ১২ জুন ১৭

জেলা প্রশাসনের ইফতার সম্পন্ন