মো. আনোয়ার হোসেন শাহীন, মাগুরাবার্তাটোয়েন্টিফোর.কম
মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলাবাসীর দুঃখ হিসেবে পরিচিত বাসস্ট্যান্ড এলাকার ১০০ গজ সড়ক। প্রায় একযুগ সংস্কার না হওয়ায় একটু বৃষ্টিতে কাদা-পানিতে সয়লাব হয়ে পড়ে গুরত্বপূর্ণ সড়কটি। গর্তে ভরা-এবড়ো থেবড়ো সড়কে দুর্ভোগের শেষ থাকে না। সড়কটি রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে রয়েছে সড়ক ও জনপদ বিভাগ (সওজ)।
পথচারীদের দুর্দশা লাঘবে এবার উপজেলা নির্বাহী অফিসার জনাব চৌধুরী রওশন ইসলাম এবার নিজেই সড়কটি সংস্কারের উদ্যেগ নিলেন। আজ বুধবার বিকেলে থেকে সড়কের জলাবদ্ধ জায়গার গর্তগুলো শ্রমিক লাগিয়ে পুরনো ভবন ভাঙার সিমেন্ট-বালু দিয়ে ভরাটের কাজ শুরু করিয়েছেন তিনি।ভুক্তভোগীরা বলছেন, এতে কিছুটা হলেও পথচারীদের দুর্দশা লাঘব হবে।
স্থানীয়রা জানান, উপজেলা সদরের প্রাণকেন্দ্রে বাসস্ট্যান্ড এলাকার একশ’ গজ সড়ক ১২ বছরেও সংস্কার হয়নি। এতে সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন পথচারীরা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, কয়েক দিনের বৃষ্টিতে সড়কের বিভিন্ন স্থানে ছোট-বড় অসংখ্য গর্তের সৃষ্টি হয়েছে।
নিস্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় বৃষ্টির পানি জমে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। বাজারের নোংড়া আবর্জনা ও পচাঁ কাঁদা-পানিতে সয়লাব হয়ে যায়। বৃষ্টি নামলেই সড়কের এমন চিত্র এ এলাকার মানুষের কাছে চিরচেনা দৃশ্য।
সদরের ‘প্রবেশদ্বার খ্যাত’ সড়কটি সবাইকে ব্যবহার করতে হয়। উপজেলা শহরে যতায়াতকারী স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীসহ স্থানীয় লোকজনের বেহাল সড়কে চলাচলে সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। স্থানীয়দের কাছে ‘ভোগান্তি’ সড়ক নামে পরিচিতি। কয়েক বছর আগে বিক্ষুব্ধ লোকজন সড়কে ধান লাগিয়ে মাছ ছেড়ে নানা ভাবে প্রতিবাদ জানিয়েও কোন ফল পাননি।
সম্প্রতি উপজেলা নির্বাহী অফিসার হিসেবে যোগ দেন চৌধুরী রওশন আলম। তিনি সড়কে যাতায়াতকারী লোকজনের দুর্দশা অনুধাবন করেন। আজ তিনি সড়কটি সংস্কারের জন্য শ্রমিকদেও কাজে লাগান। উপজেলা পরিষদের অভ্যন্তরে একটি ভাঙা ভবনের ইট বালু সিমেন্টের অংশ ট্রাকে নিয়ে সড়কের বড় বড় গর্ত ভরাটের কাজ শুরু করান।
স্থানীয়দেও অভিযোগ, উপজেলা সদরের অধিকাংশ রাস্তাঘাট সংস্কারের দায়িত্ব স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের (এলজিইডি)। এই সড়কটির তদারকি প্রতিষ্ঠান সড়ক ও জনপদ বিভাগ (সওজ)। সহওজ’র কার্যালয় জেলা শহরে অবস্থিত। বরাদ্দ নেই এমন অজুহাতে ১২ বছরের বেশি সময় সড়কটি সংস্কার করছে না ।
চিকিৎসা, ব্যবসা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও দাপ্তরিকসহ বিভিন্ন কাজে প্রত্যন্ত এলাকা থেকে প্রতিদিন কয়েক হাজার মানুষ উপজেলা শহরে যাতায়াত করেন। স্বল্প সময়ে ফরিদপুর ও নড়াইলে যেতেও লোকজন সড়কটি ব্যবহার করেন।
বছরের পর বছর ধরে চলে আসা সড়কটির বেহাল দশা দেখলে মনে হয়, এ নিয়ে কারো মাথা ব্যাথা নেই। ভূক্তভোগিরা জানান, সমান্য বৃষ্টিতেই সড়কে জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। বড় বড় গর্ত পানিতে ডুবে থাকে। গর্তে গাড়ির চাকা ও পথচারীর পা আটকে গিয়ে প্রায়ই ঘটছে ছোটবড় দুর্ঘটনা। বৃষ্টির পানিতে নোংড়া আবর্জনা ও কাদায় সয়লাব পুরো রাস্তা। কাদা মাড়িয়ে যানবাহন ও মানুষের চলাচল করতে হয়। কাপড় আর গা বাচিয়ে সড়ক পার হওয়ার উপায় নেই। একেবাওে কাজ না হওয়ার চেয়ে এই সংস্কার কিছুটা হল্ওে তাদের উপকারে আসবে।
উপজেলা সদরের আর, এস,কে,এইচ ইনস্টিটিউশনের শিক্ষক আকরাম খান আক্ষেপ করে বলেন, উপজেলা শহরের প্রধান সড়কটির এ বেহাল দশা দীর্ঘদিনের। প্রতিদিন কাদা-পানি মাড়িয়ে চরম ভোগান্তি নিয়ে এ পথে আমাদের চলতে হয়। তিনি ভোগান্তি থেকে রক্ষা পাওয়ার দাবি জানান।’
স্কুল শিক্ষিকা মদিনা বেগম বলেন, দুটি কলেজসহ পাঁচটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কয়েক হাজার শিক্ষার্থীকে নিরুপায় হয়ে এই ‘ভোগান্তি’ সড়ক পার হতে হয়। প্রসূতি মা ,রোগী ও বৃদ্ধদের কাছে এ সড়কটি এখন আতঙ্কের নাম।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পথচারী বলেন, জনপ্রতিনিধিরা চলেন কোটি কোটি টাকার দামি গাড়িতে। আমাদের মতো পায়ে হেটে গন্তব্যে যেতে হয় না।
স্থানীয় প্রবীণ সাংবাদিক আব্দুল ওয়াহাব বলেন, পায়ে হেটে রাস্তাটি পার হওয়া সম্ভব নয়। উপজেলায় ক্ষমতাসীন দলের একাধিকনেতা রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ পদে আছেন। সড়কটি সস্কারের প্রতিশ্রুতি দিলেও কোন উদ্যেগ নেওয়া হয়নি।
জানতে চাইলে মহম্মদপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) চৌধুরী রওশন আলম জানান,‘আমি এ উপজেলায় সম্প্রতি যোগ দিয়েছি। উপজেলা সদরের প্রবেশ দ্বারের এই সড়কটির বেহাল দশা দশা দেখে অবাক হয়েছি। পথচারী কষ্ট একটু লাঘব করতে উদ্যোগ নিয়েছি মাত্র।’
০৩ মে ২০১৭/