ডা. তোফাজ্জেল হক চয়ন, মাগুরাবার্তাটোয়েন্টিফোর.কম

বঙ্গবন্ধু হত্যার ২৯ বছর পর তাঁরই কন্যা দেশরত্ন শেখ হাসিনাকে হত্যা করতে ঘাতকদের দল ২০০৪ সালের এই আগস্টেই আবারও জোট বেঁধেছিল।

শোকাবহ-রক্তাক্ত আগস্ট মাসেই আরেকটি ১৫ আগস্ট ঘটানোর টার্গেট থেকে ঘাতক হায়েনার দল ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড দিয়ে রক্তস্রোতের বন্যা বইয়ে দিয়েছিল বঙ্গবন্ধু এ্যাভিনিউয়ের আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের সমাবেশস্থলে।

আগস্ট মাসটি বাঙালিকে ভুলতে দিতে চায়না হায়েনার দল। ১৪ আগস্ট পাকিস্তানের স্বাধীনতা দিবস, রক্তক্ষয়ী ৯ মাসের মুক্তিযুদ্ধের মাঝ দিয়ে যে স্বাধীনতা দিবস ও তার আগস্টকে বাঙালি চিরতরে ভুলে আসতে চেয়েছিল। সেটাকেই চিরকাল মনে রাখার জন্যই চক্রান্তকারীরা নতুন পন্থা বেছে নিল।

কেন হত্যাকারীরা এই আগস্টকেই বেছে নিয়েছিল? এর পেছনে এক অভিনব চিত্তাকর্ষক যোগসূত্র রয়েছে। পরাজয়ের গ্লানির সে যোগসূত্র থেকেই  এ মাসেই বঙ্গবন্ধুকে হত্যার ষড়যন্ত্র করে একাত্তরের পরাজিত শক্তি।

পঁচাত্তরের ঠিক ২৯ বছর পরেও তাদের টার্গেট ছিল এক ও অভিন্ন। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগকে সম্পূর্ণ নেতৃত্ব শূন্য ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধ্বংস করতেই ঘাতকরা চালায় এই দানবীয় হত্যাযজ্ঞ।

২০০৪ সালের ২১ আগস্ট এক মৃত্যুনৃত্যের বিকেলের নাম। আওয়ামী লীগ ও অন্যান্য সহযোগী সংগঠনের ২৪ জন জীবন দিয়েছেন শান্তির সপক্ষে সমাবেশ করে। ভয়াবহ গ্রেনেড হামলায়। আহত হওয়া পাঁচ শতাধিক নেতাকর্মীর অনেকেই ঘাতক গ্রেনেডের স্প্রি­ন্টারের দুর্বিষহ যন্ত্রণা নিয়েই দিনাতিপাত করছেন। হাত-পা-চোখসহ দেহের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ হারিয়ে অসংখ্য নেতাকর্মী পঙ্গুত্ববরণ করে জীবনধারণ করছেন। অনেকে দুর্বিষহ যন্ত্রণা বুকে নিয়েই মৃত্যুবরণ করেছেন। মানবঢাল তৈরি করে দলের নেতারা সেদিন রক্ষা করেছিলেন বঙ্গবন্ধু কন্যা দেশরত্ন শেখ হাসিনাকে।

গণতান্ত্রিক অভিযাত্রা, বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধ্বংস করতে সেদিন শেখ হাসিনাকে হত্যা করতে চেয়েছিল ঘাতকচক্র। ঘাতকের গ্রেনেড হামলায় রীতিমতো রক্তগঙ্গা বইয়ে গিয়েছিল আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের প্রাঙ্গণ। সন্ত্রাসবিরোধী আওয়ামী লীগের জনসভাকে ঘিরে কোলাহলপূর্ণ বঙ্গবন্ধু এভিনিউ মুহূর্তেই পরিণত হয়েছিল বীভৎস মৃত্যুপুরীতে। সুপরিকল্পিত ও ঘৃণ্য এই গ্রেনেড হামলা চালিয়ে রক্তাক্ত ও শোকাবহ আগস্টে আরেকটি ১৫ আগস্ট সৃষ্টির অপচেষ্টা করেছিল পরাজিত ঘাতকচক্র। তৎকালীন বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মদদে হায়েনাদের হামলার ধরনও ছিল রক্তাক্ত ১৫ আগস্টের মতোই।
তবে শুধু ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট নয়; এর আগে ও পরেও বঙ্গবন্ধুর রক্তের উত্তরাধিকার, সারা বাংলার মুক্তিকামী মানুষের নেত্রী শেখ হাসিনাকে বার বার হত্যা চেষ্টা করা হয়েছে। ১৯৮৮ সালে ২৪ জানুয়ারি, চট্টগ্রামের লালদীঘি ময়দানে, ১৯৮৯ এর ১১ আগস্ট রাতে ধানমন্ডির বাসভবনে ফ্রিডম পার্টির হামলা, ১৯৯১ এর ১১ সেপ্টেম্বরে রাজধানীর গ্রিনরোডের কাছে ধানমন্ডি স্কুলে, ১৯৯৪ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর ঈশ্বরদী ও নাটোর রেল স্টেশনে প্রবেশের মুখে তাকে বহনকারী রেল গাড়ি লক্ষ্য করে গুলি ছোঁড়া হয়েছে। ১৯৯৫ এর ৭ ডিসেম্বর শেখ রাসেল স্কোয়ারের নিকট সমাবেশে ভাষণ দানরত অবস্থায় শেখ হাসিনার উপর গুলি বর্ষণ করা হয়। এভাবে অনেক বার আঘাত করার চেষ্টা করেছে ঘাতকের দল। কিন্তু জনগণের অপরিসীম ভালবাসা ও বিধাতার কৃপায় নেত্রী বারবার রক্ষা পেয়েছেন। ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় আসার পর পুরো মেয়াদ জুড়ে বিভিন্ন ভাবে নেত্রীকে হত্যাচেষ্টা করেছে। সে আমলেই ভয়াবহ গ্রেনেড হামলার ঘটনা ঘটে। সর্বশেষ ২০১৫ এর ৭ মার্চ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে যাওয়ার সময়ে কাওরানবাজারে প্রধানমন্ত্রীর গাড়িবহরে বোমা হামলা চালানোর চেষ্টা চালায় জেএমবি।

আজকের নব্য জেএমপি, পুরাতন জেএমবি, আইএস-সহ সব জঙ্গি সংগঠনের টার্গেট কেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কারণ এসব জঙ্গি সংগঠনগুলো বিএনপি-জামায়াতের বি-টিম। জেএমবি নামটির সঙ্গে জড়িত উত্তরের জেলা রাজশাহী। এ জেলার বাগমারাকে সবাই চেনে জেএমবির ঘাঁটি হিসেবে। ২০০১ সালের পর তারেক রহমান, রাজশাহী অঞ্চলের দুই মন্ত্রী-স্থানীয় এমপি, তৎকালীন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, জেলার পুলিশ সুপার ও রাষ্ট্রের সমান্তরাল ক্ষমতার উৎস হাওয়া ভবন থেকে নিয়ন্ত্রণ করা হতো এসব জেএমবি’দের। এক পর্যায়ে সে সময়ের সরকারের শরিক জামায়াতের আমীর বলেই বসল ‘বাংলা ভাই’ মিডিয়ার সৃষ্টি। তাদের সেই জেএমবিকে তারা এখন নতুন মোড়কে আইএস- বানিয়েছে। তাদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য একটাই এদেশ থেকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা চিরতরে বিলুপ্ত করা। তারা দেশকে পাকিস্তানি ভাবধারায় গড়ে তুলতে চায়। মুছে ফেলতে চায় জাতির গৌরবের ইতিহাস- জাতির জনকের স্বাধীনতার দীর্ঘ লড়াই, একাত্তর আর মুক্তিযুদ্ধ। যেভাবে ভুয়া জন্মদিন হাজার পাউন্ডের কেকে ছুড়ি চালিয়ে জাতির শোককে মুছে ফেলতে চায় খালেদা জিয়া।

বাংলাদেশ ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠার পর থেকেই জাতির জনকের সিপাহসালার ছিল। আজকের ছাত্রলীগ বঙ্গবন্ধু কন্যার ভ্যানগার্ড। কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নেতৃত্বে সারা বাংলার ছাত্রসমাজ আজ দেশরত্নের মানব বলয়। জাতির জনকের কাঙ্খিত স্বপ্ন দেশকে অর্থনৈতিক মুক্তি দেয়ার লক্ষে কাজ করে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পৃথিবী যতদিন থাকবে এদেশ থাকবে। বঙ্গবন্ধু থাকবেন সবার মনিকোঠরে। বেঁচে থাকবে মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। আমরা পঁচাত্তরের আগস্ট দেখিনি, ২০০৪ সালের আগস্ট দেখেছি। এমন অনাকাঙ্খিত মুহূর্ত দেখতে চাইনা; তারপরও দেশরত্নের রক্ষাকবচ দেশের লাখো ছাত্র-জনতা। দেশরত্নের দীর্ঘায়ূ হোন। জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু।

লেখক: সহ-সভাপতি; বাংলাদেশ ছাত্রলীগ।