বিশেষ প্রতিনিধি, মাগুরাবার্তা
মাগুরায় জনগণের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় নিয়োজিত সরকারি প্রতিষ্ঠান জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের জেলা কার্যালয়টি নিজেই স্বাস্থ্য ঝুকিতে রয়েছে। বছরের পর বছর সংস্কারের অভাবে জলাবদ্ধতা, পয় নিস্কাষণ সংকট আর সাপের ভয়ে এখানকার কর্মকর্তা কর্মচারিরা স্বাস্থ্য সংশয়ের মধ্যে অফিস করতে বাধ্য হচ্ছেন । পুরো বর্ষাকালজুড়ে সেবা নিতে আসা সাধারণ মানুষ ভেতরের রাস্তায় কিংবা বাথরুমে চলতে গিয়ে পা পিছলে শারীরিকভাবে ক্ষতির সম্মুখিন হচ্ছেন। শহরের কেন্দ্রস্থল ভায়নার মোড় কলেজ রোডে অবস্থিত প্রাচীণ এ প্রতিষ্ঠানটি নিজেই এখন জনস্বাস্থ্যের উদ্বেগের কারণ। যদিও কর্তৃপক্ষ বলছেন এটির সংস্কারে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।
জানা গেছে- জেলায় সরকারিভাবে সুপেয় পানির স্যালো টিউবয়েল, ডিপ টিউবয়েল, পাইপ লাইনের মাধ্যমে নিরাপদ পানি সরবরাহ, স্বাস্থ্য সম্মত ল্যাট্রিন, পয়ঃ নিস্কাষনসহ জনস্বাস্থ্যের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলি এ অফিস থেকে সম্পন্ন করা হয়। কিন্তু প্রতি বছর বর্ষার শুরু থেকেই জলাবদ্ধতায় এ অফিসে ঢোকা ও অফিস কাজ করা কষ্ঠসাধ্য হয়ে পড়ে। সামান্য বৃষ্টিতেই অফিসের ভেতরে পানি জমে যায়। এমনকি প্রকৌশলীদের কার্যালয়েও পানি থৈ থৈ করে । পানি বের হওয়ার জায়গা না থাকায় দীর্ঘদিন ধরে আটকে থাকা পানিতে মশা মাছি জন্ম হয়। ভেতরের রাস্তাঘাট পিচ্ছিল হয়ে থাকে। অফিসের বাথরুম ডুবে গিয়ে পুরো চত্বরে ময়লা ছড়িয়ে থাকে। প্রায়ই অফিসের ভিতরে সাপের দেখা মেলে। বছরের পর বছর এ সমস্যা যেন নিত্য দিনের সঙ্গী হয়ে উঠেছে।
জেলার মঘি ইউনিয়নের তিতার খাঁ পাড়া গ্রামের রবিউল ইসলাম নামে এক সেবা প্রত্যাশি জানান- কয়েকদিন আগে তিনি ও তার এক বন্ধু একটি কাজে এ অফিসে আসেন। অফিসের ভেতরে ঢুকতেই দেখা যায় প্রচুর কাদা জমে আছে রাস্তার উপর। তিনি না বুঝে শুকনা কাদার উপর পা দিতেই পা পিছলে পড়ে গিয়ে তার পা ভেঙ্গে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিল।পরে তিনি চিকিৎসকের স্মরণাপন্ন হতে বাধ্য হন। তিনি বলেন, জনস্বাস্থ্য অফিস নিজেই তো স্বাস্থ্য সমস্যায় ভূগছে। তারা জনগণের স্বাস্থ্য সেবা দিবে কিভাবে? একই ভাবে একাধিক সেবাগ্রহীতা এ অফিস থেকে সেবা নিতে গিয়ে নানা প্রকার বিড়ম্বনায় পড়েছেন।
সম্প্রতি সরিজমিনে অফিসটিতে গিয়ে দেখা গেছে মাত্র ২ ঘন্টার বৃষ্টিতে অফিসের সামনের চত্বর ও রাস্তা ডুবে গেছে। ডুবে গেছে পশ্চিম দিকের মাগুরা সদর ও শ্রীপুর (হেডকোয়ার্টার) এর সহকারি প্রকৌশলী মোঃ জিন্নারুল ইসলামের অফিস কক্ষসহ আশপাশের বেশ কয়েকটি কক্ষ, বাথরুম ও রুমের ভেতরে টেবিলে রাখা কম্পিউটর এর সিপিইউ পানিতে ডুবে গেছে। একাধিক সেলফে রাখা ফাইল পানিতে ভিজে নষ্ট হয়ে গেছে। বিদ্যুৎ লাইনের সাথে পানির সংযোগে পুরো এলাকায় পানিতে ভয়ংকরভাবে বিদ্যুতায়িত হয়ে যায়। অফিসের কর্মচারিরা কোনমতে প্রাণনিয়ে বাইরে বেরিয়ে আসেন। এ বিল্ডিংটির উপরের দিকে থাকা একটি পরিবার সারারাত জীবনের ঝুকি নিয়ে বাসায় থাকতে বাধ্য হন। অন্যদিকে অফিসটির পেছনের দিকে পৌরসভার ড্রেনটিতে বিভিন্ন স্থানে ময়লা আবর্জনায় প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। বেশ কয়েকটি স্থানে ড্রেনের পাশের নির্মাণাধীন বাড়িগুলির নির্মাণসামগ্রী ড্রেনের মধ্যে গিয়ে পানি নিস্কাষনে সমস্যা হচ্ছে। Magura Jonoshastho Office Jolaboddhota pic 2
এ প্রসঙ্গে মাগুরা পৌরসভার প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমান জানান- পৌরসভার ড্রেনেজ ব্যবস্থার কিছু কিছু স্থানে ড্রেনের মধ্যে নির্মাণ সামগ্রী ফেলে ড্রেন বন্ধ করে দেয়ায় কিছু জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে। এগুলিকে দ্রুত অপসারণের জন্য পৌর কর্মীরা কাজ করে যাচ্ছে। তবে এ ব্যাপারে জনসচেতনতা বেশী প্রয়োজন।
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর মাগুরার নির্বাহী প্রকৌশলী আবু বক্কর সিদ্দিকী জানান- পাকিস্থান আমলে স্থাপিত এ অফিসটি মূলত রাস্তার লেভেল থেকে কিছুটা নিচে। যারফলে শহরের অনেক স্থানের পানি গড়িয়ে অফিসের ভিতরে ঢুকে যায়। অফিসের পশ্চিম দিকটি রাস্তার লেভেল থেকে বেশ নিচু হওয়া একটি বিল্ডিং এর ভেতরে পানি ঢুকে যায়। পানি নিস্কাষনে তেমন ব্যবস্থা না থাকায় প্রতি বছরই এ সমস্যা সৃস্টি হচ্ছে। অফিসের ছোটখাট পরিস্কার পরিচ্ছন্নতার বাজেট দিয়ে এ সমস্যা সমাধান করা সম্ভব না। তবে প্রধান কার্যালয়ে বড় ধরনের সংস্কার কাজের জন্য বরাদ্দের আবেদন করেছেন বলে তিনি জানান।

রূপক / মাগুরা / ৯ জুলাই ২০২১